বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মির্জাপুরের পাহাড়ি এলাকায়
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ফসলি জমি ও বসতভিটা তলিয়ে নিম্নাঞ্চলের মানুষ দিশেহারা। বন্যার পানিতে এ উপজেলার কৃষকের বছরের বাড়তি ফসলটুকু ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে এর মধেই আশার আলো জেগেছে উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মধ্যে।
চলতি বছর এ উপজেলায় ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোনা আমনের আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। আবাদি জমি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা ও বৃষ্টির পানিতে প্রায় ৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোনা আমন ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ১৪ হেক্টর আউশ ধান ও ১২৫ হেক্টর সবজি আবাদ তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছেন।
অপরদিকে উপজেলার পাহাড়ি এলাকার কৃষকেরা এই সময় রোপা আমন ধানের আবাদ করছেন। বৃষ্টির পানি যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে তাদের জন্য।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে মির্জাপুর উপজেলা গঠিত। এ উপজেলার বাঁশতৈল, আজগানা ও তরফপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এবং লতিফপুর ও গোড়াই ইউনিয়নের আংশিক এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু বলে পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি। উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়ন ছাড়া সব ইউনিয়নেই বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌরসভার বহুরিয়া, ভাওড়া, ভাদগ্রাম, ওয়ার্শী, আনাইতারা, বানাইল, জামুর্কী, মহেড়া ও ফতেপুর ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোনা আমনের আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। আবাদি জমি নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বন্যা ও বর্ষার পানিতে বোনা আমন ধান, আউশ ধান ও সবজি আবাদ তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
তবে এ বছর উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে উফশি জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ হবে। ইতোমধ্যে ওই এলাকার কৃষকরা তাদের জমিতে আবাদ শুরু করেছেন। যেখানে পুরো উপজেলার লক্ষ্যমাত্রার দুই তৃতীয়াংশ ধান উৎপাদন হবে বলে স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
বর্ষার পানি পাহাড়ি এলাকার ওইসব জমিতে না জমায় সেচ দিয়ে পানির ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু এ বছর টানা বৃষ্টির পানি ওইসব জমিতে জমেছে যা রোপা আমন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। অল্প সময়ে আবাদকৃত এই ধান ঘরে তুলতে পারেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
বাঁশতৈল গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার কৃষক মো. হালিম মিয়া জানান, তিনি প্রায় ৬০ শতক জমিতে আমন ধানের আবাদ করছেন। এরই মধ্যে ১০ শতক জমিতে ধান বোনার কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে চারা লাগানোর জন্য জমি পরিচর্যা করছেন।
একই এলাকার কৃষক আমির মিয়া বলেন, ‘আমাগো পাহাড় এলাকায় ম্যালা জাগায় খালি বৃষ্টির পানিতেই এই ধান অয়। খালি চারা বুনতে যে কষ্ট আর খরচ লাগে। এইবার বৃষ্টিতে আমাদের জমির মাটি অনেক নরম হয়েছে। কষ্ট কম হইছে। তিন মাসের মধ্যেই এই ধান কাটন যায়।’
শ্রমিক গৌতম সরকার জানান, ১০ কেজি ধান দিয়ে বীজতলা তৈরি করলে প্রাপ্ত চারা দিয়ে প্রায় ৫৬ শতক জায়গায় আবাদ করা যায়। এই ধান পাহাড়ি এলাকার বাড়তি আয়ের উৎস। ৮০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ধান কেটে ঘরে তোলা যায়। এই এলাকায় ধানগুলোর উৎপাদন খুবই ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, বন্যার কারণে মির্জাপুরের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমির বোনা আমন, ১৪ হেক্টর জমির ধান ও ১২৫ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় বন্যার পানি না ওঠায় কৃষকরা উফশি জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ করছেন। এতে সেচের প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টির পানিতেই ধানের উৎপাদন হয়। এতে স্থানীয় চাহিদা মেটে।
এরশাদ/এফএ/জেআইএম