পেয়ারা বিক্রি করে দুই সন্তানের লেখাপড়া চালাচ্ছেন লিজা
ঝালকাঠি সদর উপজেলার শতদশকাঠি গ্রামের সংগ্রামী নারী লিজা (৪৫)। শহরের কালিবাড়ী রোডে পেয়ারা ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেন। প্রতিদিন বেলা ১১টায় বসে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করেন। এতে যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। স্বামী পরিত্যক্তা লিজার এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। তার উপার্জনেই লেখাপড়া চলছে দুই সন্তানের।
লিজা বলেন, দাম্পত্য জীবনে প্রথমে মেয়ে এবং পরে ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ছেলের বয়স যখন আড়াই বছর তখন স্বামী আমাদের ফেলে চলে যান। মেয়ে মাদারীপুর সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউটে এবং ছেলে ঝালকাঠি সরকারি কলেজে এইচএসসিতে পড়ে। এতো বছর স্বামীর খোঁজ করেও এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাইনি।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্বামী থাকতেও যখন সন্তানরা পিতৃহারা, তখন মাকেই উভয় দায়িত্ব পালন করতে হয়। বৈশাখ থেকে চৈত্র হিসেবে প্রতি বছর পেয়ারা চাষের জন্য এক বিঘা জমি লিজ নিই। বাগান পরিচর্যা করে সেখানে পেয়ারার পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি শসা, করলা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল, লেবু ও পেপে চাষ করি। তা বাগান থেকে কেটে স্থানীয়ভাবে পাইকারদের কাছে বিক্রি করলে ন্যায্যমূল্যের চেয়ে দাম কম পাওয়া যায়। তাই ভ্যান গাড়িতে করে ঝালকাঠি শহরে নিয়ে বিক্রি করি।
লিজা বলেন, এখন পেয়ারার মৌসুম। তাই পেয়ারা ও মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করছি। এভাবে শহরের রাস্তার পাশে সবজিও বিক্রি করি। অন্য কোনো আয় না থাকায় পেয়ারা বাগানের কৃষিতে যা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার ও ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাই। দুই সন্তানের মধ্যে মেয়ে বড়।
সন্তানদের দিকে তাকিয়ে একার শ্রম দিয়েই সব কিছু করতে হচ্ছে। কারণ দরিদ্র বাবার বাড়িতে শুধুমাত্র থাকার জায়গাটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। সন্তানদের সামাজিক মর্যাদার কথা চিন্তা করে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হননি সংগ্রামী নারী লিজা।
আতিকুর রহমান/আরএআর/জেআইএম