পানি বাড়লে ঘর ডুবছে, কমলে ঘর ভাঙছে
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ অন্যান্য নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টানা ২৫ দিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। এরমধ্যে তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড ভাঙন। ভাঙন আর বন্যায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। তিন বেলার জায়গায় অনেকে দু’বেলা খেয়ে দিন কাটাচ্ছেস। জনপ্রতিনিধিরাও ত্রাণ সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার সংকট, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা। এছাড়াও জরুরি ওষুধের প্রয়োজনও দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মাঝখানে ২ থেকে ৩ দিন পানি কমে গেলেও গত এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি আবারও বাড়ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারীতে ৬৯ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
টানা বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার পাঁচ ভাগের তিনভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ ইউনিয়নের প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামের সাড়ে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এতে ৫০ হাজার বাড়িঘর বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যায় ৫টি স্কুল ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১৩৯টি। এছাড়াও ৩৭ কিলোমিটার সড়কপথ ও ৩১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে গৃহহীন হয়েছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার।
জেলার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হানিফা জানান, আমরা ত্রাণ সঠিকভাবে পাচ্ছি না, যেভাবে পাওয়া উচিৎ জনগণ সেভাবে পাচ্ছে না। এই মুহূর্তে শুকনো খাবার, স্যানিটেশন, পানি ও ওষুধের ভীষণ প্রয়োজন।
এদিকে বন্যার মধ্যেই তিস্তা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ও বিদ্যানন্দ এবং উলিপুর উপজেলার থেতরাই ও বজরা ইউনিয়নের কাসিমবাজারে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিস্তার পানির প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়ির হাট এলাকায় ক্রস বারের মাটির ৫০ মিটার পানিতে ভেসে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিরাম এলাকার ক্রস বারেও। এতে করে ওই দুই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রাম ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। গত ৫ দিন ধরে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল আজিজ (৬২) জানান, তিস্তার ভাঙনে ৬ বার বাড়ি ভেঙেছি। এবার আর জায়গা না থাকায় চর বিদ্যানন্দ থেকে পার্শ্ববর্তী গাবুর হেলানে জামাই নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছি।
এই এলাকার হক্কানী মিয়া জানান, এখানে গত ৮ দিন ধরে ভাঙন চলছে। আজও ৫টি বাড়ি সরিয়েছে। যেভাবে ভাঙছে তাতে হুমকির মুখে রয়েছে গাবুর হেলান মসজিদ, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাজাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়, সোলাবাড়ি সারকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহাসানিয়া দাখিল মাদরাসা, রাঘব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠ ও কবরস্থান। এগুলো সবই বিলীনের পথে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছি। ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য দিয়েছি। এছাড়াও ৫ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছি।
নাজমুল হোসেন/এফএ/এমএস