বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে বানভাসিরা
করোনা দুর্যোগের মধ্যে আকস্মিক বন্যা যেন এক মহাবিপদ মানিকগঞ্জের বানভাসি মানুষের জন্য। হঠাৎ করেই পদ্মা-যমুনা ফুঁসে ওঠায় বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে জেলার ৪টি উপজেলা। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে পদ্মার পানি। ফলে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সবচেয়ে কষ্টে আছে চরাঞ্চলের মানুষ। বাড়িঘরে পানি থাকায় পরিবার পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের একটি ইউনিয়নের নাম বাঁচামারা। যমুনার পানিতে এই ইউনিয়নের বেশির ভাগ বাড়িঘরই তলিয়ে গেছে।
সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কারো ঘরের চাল সমান পানি। কারো ঘরে গলা সমান। রাস্তা-ঘাট সব তলিয়ে গেছে। ডুবেছে হাট-বাজারও। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে।
এদেরই একজন বাঁচামারা গ্রামের উসমান গণি। বাড়িতে পানি ঢুকেছে সপ্তাহ খানেক ধরে। বর্তমানে তার ঘরের ভেতর কোমর সমান পানি। পরিবার-পরিজন, গরু-ছাগল আর হাঁস-মুরগী নিয়ে এর মধ্যে বসবাস করা অসম্ভব। তাই নৌকার ভেতর মালামাল সব তুলে তিনি যাচ্ছেন পার্শ্ববর্তী চরকাটারি এলাকায়।
উসমান গণি জানান, ঘরের ভেতর পানি। কোথাও বের হওয়া যায় না। টিউবওয়েল ও টয়লেট তলিয়ে গেছে। পয়োনিষ্কাশন আর খাবার পানির তীব্র সংকট। রান্না-বান্নাও বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে একটু উচুঁ জায়গায় আশ্রয়ের জন্য আপাতত বাড়ির মায়া ত্যাগ করছেন।
একই গ্রামের আ. রহিম জানান, ঘরে পানি ওঠার পর স্ত্রী আর ছোট সন্তানদের তিনি অন্যত্র রেখে এসেছেন। বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্যই কষ্টে করে আছেন তিনি। চিড়া-মুড়ি খেয়েই কাটছে তার দিন।
তিনি বলেন, এই বিপদে সরকার পাশে না দাঁড়ালে তাদের বাঁচা সম্ভব নয়।
মানিকগঞ্জের বন্যাকবলিত হরিরামপুর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার চরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকার চিত্রই এমন। ঘরের ভেতর উঁচু মাচা করে অনেকেই আছেন চরম কষ্টে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুর্গতদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করলেও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছেনি বেশির ভাগ এলাকায়।
দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, তার ইউনিয়নের ৯০ ভাগ বাড়ি ঘরেই এখন পানি। বন্যার শুরুতেই নদী ভাঙনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক মানুষ। করোনার এই সময় বন্যা ও নদীভাঙনে বিপর্যস্ত তারা। ইউনিয়ন পরিষদের পাশে উঁচু জায়গায় অনেকেই স্থান নিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনা খাবার সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে।
বি.এম খোরশেদ/এফএ/পিআর