১০ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন শুকুম আলী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৮:৫৮ এএম, ১৯ জুলাই ২০২০

দশ বছর ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার শুকুম আলী চৌকিদার (৩২)। সন্ধ্যা বা রাতে ভাবি পারুল বেগম শিকলের তালা খুলে ঘরে নেন। আবার সকালে ঘর থেকে বের করে পায়ে শিকল বাঁধেন।

উপজেলার ডিঙ্গামানিক ইউনিয়নের জালিয়াহাটি গ্রামের মৃত আবুল হাশেম চৌকিদার ও মৃত আনোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে শুকুম আলী চৌকিদার। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে শুকুম আলী ছোট। শুকুম আলী মানসিক প্রতিবন্ধী। দশ বছর ধরে সারাদিন একটি ঘরের খুঁটিতে পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয় তাকে। রাত হলে নেয়া হয় ঘরে।

শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে দেখা যায়, একটি খুঁটির পাশে শিকলবন্দি শুকুম আলী একা বসে আছেন। মাঝে মধ্যে অদ্ভুত আচরণ করছেন। পাশেই সড়কে পথচারীরা হেঁটে যাচ্ছেন। পথচারী ও গ্রামবাসীদের দেখলেই শুকুম আলী ছালাম দিচ্ছেন, বলছেন কেমন আছেন? কিন্তু কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিচ্ছেন না তিনি।

শুকুম আলীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, জন্ম থেকেই শুকুম আলী মানসিক প্রতিবন্ধী। শুকুমের বয়স যখন ১৬ বছর তখন তার মা মারা যায়। আর ২২ বছরে মারা যান বাবা। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর শুকুম আলীর মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান তিনি। ৯ মাস পর তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবার। আবার যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে না পারেন তাই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

Sukum-Ali

শুকুম আলীর মেজ ভাবি পারুল বেগম বলেন, যত দিন যাচ্ছে, ততই শুকুম আলীর মানসিক সমস্যা বাড়ছে। ছেড়ে রাখলে এলাকার ছোট ছেলে-মেয়েরা পাগল বলে মারে। আমার স্বামী ও ভাসুর সকালে কাজে চলে যায়, সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরেন। আর আমি সারাদিন সংসারের কাজ করি। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয় শুকুম আলীকে।

তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্বামী ও ভাসুর দিনমজুরের কাজ করে যা টাকা পান তাতে পরিবারের খাওয়ার খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হয়। শুকুম আলীর চিকিৎসা কিভাবে করাব? চিকিৎসার অভাবে তার মানসিক সমস্যা বাড়ছে।

জালিয়াহাটি গ্রামের জব্বার আলী ব্যাপারী, আব্দুল মজিদ ব্যাপারী ও লিটন চৌকিদার জানান, অনেক বছর যাবত শুকুম আলী মানসিক প্রতিবন্ধী। তার পরিবার অনেক গরিব ও অসহায়। তাই অর্থের অভাবে শুকুম আলীর ভালো চিকিৎসা করাতে পারছে না। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়ত সুস্থ হয়ে যেত শুকুম আলী। তাই সমাজের বিত্তবানদের শুকুম আলীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তারা।

ডিঙ্গামানিক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনির হোসেন সুমন বলেন, মাঝে মধ্যে শুকুম আলীকে আমি দেখতে যাই। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করি। চিকিৎসা করালে শুকুম আলী ভালো হয়ে যেতে পারেন।

এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়ন্তী রূপা রায় মুঠোফোনে বলেন, শিকলে বেঁধে রাখার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিকলবন্দি মানসিক প্রতিবন্ধী ওই যুবককে অচিরেই সামাজিক কর্মসূচির আওতায় আমরা নিয়ে আসব। খোঁজ নিয়ে সমাজ সেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় কিনা আমরা দেখছি।

ছগির হোসেন/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।