ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান সিকদারের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটিয়ে এক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, তার পরিবারের ওপর দফায় দফায় হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার (১৭ জুলাই) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী পটুয়াখালী পৌর শহরের বাসিন্দা শামীম খান।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী শামীম খানের বাবা অবরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. ফজলুল হক ও শামীম খানের স্ত্রীসহ কয়েকজন স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অবরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. ফজলুল হক জানান, পটুয়াখালী শহরে তার ছেলের সিমেন্ট ও বালুর দোকান রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা হাসান সিকদার বাড়ি করার জন্য ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ লাখ টাকার মালামাল বাকি নেন। পরে পাওনা টাকা না দিয়ে হাসান সিকদার দীর্ঘদিন ধরে ঘুরাচ্ছিলেন। টাকা চাইতে গেলে শামীমকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এ নিয়ে হাসান সিকদারের সঙ্গে তাদের বিরোধের সূত্রপাত।
তিনি আরও জানান, এর জের ধরে গত ২৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসান সিকদারের নেতৃত্বে তার সহযোগী জাহিদ, আবুল বাশার আরজু, শাকিল, বশির ও খোকাসহ বেশ কয়েকজন তার বাড়িতে ঢোকেন। এরপর পিস্তল ঠেকিয়ে বাসার মূল্যবান ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, ৯ ভরি স্বর্ণালংকার, দুটি ব্লাংক চেক ও নগদ ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা তারা লুট করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ওসি আখতার মোর্শেদ নানা টালবাহানা করে কয়েক মাস পর ডাকাতির ধারা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ব্লাংক চেক উদ্ধারের মামলা নেন।
ফজলুল হক জানান, পুলিশ ডাকাতির মামলা না নেয়ায় ছাত্রলীগ নেতা হাসান সিকদারের সাহস আরও বেড়ে যায়। এরপর তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে পথে ঘাটে হয়রানি ও অপদস্ত করতে থাকে তার পরিবারের সদস্যদের। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে শামীম খানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পটুয়াখালী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে জোর করে দুটি দলিলে স্বাক্ষর নেন হাসান সিকদার। এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি শামীম খানকে মারধর করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়ে সেটি দখল করেন।
এসব ঘটনার প্রতিকার চেয়ে হাসান সিকদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশি অভিযোগ করেছে শামীম খান। আদালত হাসান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ৩৯৫ ধারায় ডাকাতি মামলা গ্রহণ করে ৫ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার জন্য পটুয়াখালী সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপর ছাত্রলীগ নেতা হাসান সিকদার ক্ষিপ্ত হয়ে তার বড় ভাই ও সহযোগীদের দিয়ে শামীম ও স্বজনদের হয়রানি করতে আদালতে চারটি মিথ্যা মামলা করেন।
ভুক্তোভোগী ব্যবসায়ী শামীম খান বলেন, হাসান সিকদারের বিরুদ্ধে গত ১০ বছরে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টি মামলা হয়েছে। হাসান ও তার বাহিনী এমন কোনো কাজ নেই করতে পারেন না। পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে হাসান সিকদারের রোষানালে পড়েছি। একের পর এক হামলা ও মিথ্যা মামলায় আমরা এখন দিশেহারা। কোথায়ও ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। বর্তমানে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসান সিকদার জানান, শামীম খান এক সময় তার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। তারা এক সঙ্গে ব্যবসা করতেন। শামীম খানের প্রস্তাবে ২০১৬ সালে ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে তিনি যুক্ত হন। লোকসানের কথা বলে শামীম খান তার টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেন। এরপর মূলধন ফেরত চাওয়ার পর থেকেই শামীম খান ও তার বাবা ফজলুল হক ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
হাসান সিকদার উল্টো অভিযোগ করে বলেন, গত জানুয়ারি মাসে শামীম খান তাকে ৫১ লাখ টাকার চেক (অগ্রণী ব্যাংক পটুয়াখালী নিউ মার্কেট শাখা) দিলেও অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় সেটি ডিজঅনার হয়। এরপর থেকে শামীম খান ও তার বাবা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার শুরু করেন। পাওনা টাকা না দেয়ার কৌশল হিসেবে তারা এসব করছেন।
পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার মোর্শেদ জানান, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান সিকদারের বিরুদ্ধে শামীম খান বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন তা তদন্তাধীন আছে। তাই এ বিষয়ে এখন কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে তদন্তে কারও প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। ঘটনা যা ঘটেছে তা উল্লেখ করেই আদালতে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
সাইফ আমীন/আরএআর/জেআইএম