২০ বছরেও সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার বিচার হয়নি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০১:১৯ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২০

দীর্ঘ ২০ বছরেও যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে আইনের মারপ্যাঁচে আটকে রয়েছে এ হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া। এতে ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিকরা। যদিও সরকার চাইলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব বলে মন্তব্য আইনজীবীদের।

আজ (১৬ জুলাই) নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ২০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকন্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সেসময় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন আসামির আগ্রহে মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়। একই সঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্টজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়, অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট।

এরপর বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী নিহত শামছুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদী) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

নিহতের ভাই ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়েছে। এছাড়াও তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচার কাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী জানান, তাদেরও প্রত্যাশা আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হবে।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হার্ট অ্যাটাকে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পুরোনো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনর্তদন্তের দাবি তোলা হয়।

শামছুর রহমানের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র্যালি, নিহতের কবরে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও দোয়া।

মিলন রহমান/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।