রাঙামাটিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ


প্রকাশিত: ০৮:৩৭ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছে জনসংহতি সমিতি ও তার সমর্থনপুষ্ট সংগঠনগুলো।

দাবিটির বিষয়ে সরকারকে হুশিয়ারি করে ওইসব সংগঠনের নেতারা বলেছেন, অচিরেই দাবিটি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় সরকারকে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। প্রয়োজনে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামকে অচল করে দেয়া হবে। মঙ্গলবার শহরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সংগঠনগুলোর নেতারা সরকারের উদ্দেশ্যে এমন হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

সমাবেশে নেতারা বলেন, যেকোনো মূল্যে সরকারের রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন কার্যক্রম প্রতিহত করা হবে। বিশ্বদ্যিালয়টিতে যেদিন থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম সরকার শুরু করবে সেদিন থেকে তিন পার্বত্য জেলায় লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আগামী নভেম্বর মাসেই বিশ্বদ্যিালয়টির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ স্থাপন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবিতে ওই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ছাড়াও জনসংহতি সমিতি, যুব সমিতি, মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ অন্য সমর্থনপুষ্ট সংগঠন অংশ নেয়। কর্মসূচিতে রাঙামাটির রাজপথে অসংখ্য পাহাড়ি নারী-পুরুষের ঢল নামে।

সকাল ১০টায় জেলা সদরের জনসংহতি সমিতির উত্তর কালিন্দীপুরের অফিস চত্বর থেকে একটি বিশাল মিছিল বের করে বনরূপার পেট্রলপাম্প চত্বর ঘুরে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকরে কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হয়। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ-সভাপতি অনিল মারমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা, স্টাফ সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি জড়িতা চাকমা, যুব সমিতির জেলা সভাপতি টোয়েন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি চঞ্চলা চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে আরও বলেন, পাহাড়ের জুম্ম জনগণসহ দেশে-বিদেশে প্রবল দাবি সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সরকার চরম উদাসীন ও নির্বিকার। সরকারের পক্ষে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে নানা বুলি আওড়িয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে যথাযথ ও দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ এর বিরোধাত্মক ধারাগুলো ১৩ দফার ভিত্তিতে সংশোধনের জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া সত্ত্বেও সরকার ওই আইন সংশোধনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না।

এ নিয়ে অযথা কালক্ষেপণ করে চলেছে সরকার। অপরদিকে সরকার চুক্তিবিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও পেশিশক্তি দিয়ে জোর করে সরকার বিতর্কিত রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। জনমতের বিপরীতে অন্তর্বর্তী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে অগণতান্ত্রিক ও দলীয়করণের ধারা আরও জোরদার করা হয়েছে।

তারা অভিযোগ তুলে বলেন, চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষাব্যবস্থাকে চরম সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। জুম্মদের প্রথাগত ভূমি অধিকারকে পদদলিত করে তাদের মৌজা ও জুম ভূমির ওপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। বহিরাগত প্রভাবশালীদের কাছে শ শ একর ভূমি ইজারা দিয়ে পদ্ধতি বহির্ভূতভাবে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করে জুম্মদেরকে তাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

দেশে-বিদেশে প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশিদের ভ্রমণে ও জুম্মদের সঙ্গে বিদেশি-দেশীয় সংস্থার লোকজনের সাক্ষাতে বিধিনিষেধ আরোপ, পাহাড়ি পুলিশ সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সমতল অঞ্চলে বদলিসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ও বর্ণবাদী নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে চলেছে।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।