গাইবান্ধায় বাঁধের উপর বন্যার পানি
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক সড়কের উল্যা ভরতখালী এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে পানি যাচ্ছে। এই সড়কের ১০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে বন্যার পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। হুমকিতে রয়েছে কয়েকটি স্লুইসগেট। যেকোনো সময় ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ঘাঘট ও করতোয়ার পানি বৃদ্ধির ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ন ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নের পালপাড়া, চিনিরপটল, চকপাড়া, পবনতাইড়, থৈকরপাড়া, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, গোবিন্দি, নলছিয়াসহ ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর ডান তীরঘেঁষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডীপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এ উপজেলার ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে গত কয়েক বছরের মতো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে ভয়াবহ বন্যা। তাই বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন জেলার সাত উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কায় চরাঞ্চলের এসব মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করা এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, খাটিয়ামারী ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এ উপজেলার প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
সাঘাটার হাটভরতখালী এলাকার কৃষক জাকির হোসেন জানান, ভরতখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেট সংলগ্ন পশ্চিমে বস্তা দিয়ে পানি রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে।
সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল আজাদ শীতল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো কাজ না করার কারণে গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক সড়কের ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকিতে রয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, বন্যা কবলিতদের সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত আছে। এছাড়া বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশন সমস্যার সমাধানের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানান, বন্যা কবলিত মানুষদের তালিকা করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষায় সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী জানান, জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ৬০টি গ্রামের এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ২২ হাজার ৩২০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এ পর্যন্ত ৩২০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ টাকা, শিশুখাদ্য চার লাখ, গোখাদ্য দুই লাখ ও ১৮ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমান পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যা ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পানি এভাবে বৃদ্ধি পেলে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙে বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। বাঁধ রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন বলেন, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসন সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
জাহিদ খন্দকার/এফএ/পিআর