সহায় সম্বল নিয়ে বাড়ি ফিরছে খুলনার অসহায় শিক্ষার্থীরা
স্কুল, কলেজ, কোচিং সবই বন্ধ। বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি করাও বন্ধ। কবে খুলবে এসব, তাও জানে না কেউ। বাড়ি থেকে টাকা আসারও আর তেমন কোনো উপায় নেই। বিকল্প আয়েরও কোনো উৎস নেই। গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে এমন পরিস্থিতি। আর তাই শহরে বসবাস করার মতো এখন আর সঙ্গতি নেই।
বাসাভাড়া দিতে না পারায় বাড়িওয়ালাও প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়েই গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে খুলনায় বসবাস করা অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী। বই, ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে চলছেন এমন দৃশ্য খুলনায় এখন প্রতিনিয়তই দেখা যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনার বসুপাড়া, বাইতিপাড়া, বিএল কলেজ রোড, নিরালা আবাসিক এলাকা, জব্বার সরণি, ছোট মির্জাপুর, রায়েরমহল, দৌলতপুরের দেয়ানা, পাবলা, কবির বতটলা, মিয়াপাড়াসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছে ছাত্রদের মেস। এসব মেসে বসবাস করা অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই খুলনার বাইরে থেকে এসে খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের খরচ চালাতে কেউ করছেন টিউশনি।
কেউ কোচিং সেন্টার পার্টটাইম শিক্ষকতাও করছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন দোকানেও কাজ করছেন। কিন্তু তাদের সেই সব কিছুই আজ বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া। শুধু খুলনা শহরে এমন পরিস্থিতি তা নয়। সবখানেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে বাড়ি থেকেও আর আর্থিক সহযোগিতা তেমন আসছে না। ফলে মেসের ভাড়ার পাশাপাশি প্রতিদিনের তিন বেলার খাবারও অনেক সময় ঠিকমতো পাচ্ছেন না তারা।
খুলনার বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের (হিসাব) ছাত্র নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সরল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। খুলনার বিএল কলেজের সুনাম খুলনায় সবচেয়ে বেশি। তাই সেখানেই ভর্তি হন। খুলনায় এসে তিনটি টিউশনি জোগাড় করেছিলেন দুই বছর আগে। তা দিয়েই তার ভালোই চলছিল। বাড়ির অবস্থা খুব ভালো না হলেও কোনো সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু সেই টিউশনিগুলো গত চার মাস ধরে বন্ধ। ফলে জমানো যে কয়টা টাকা ছিল তাও শেষ হয়ে গেছে। এখন বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরে যেতে হবে’।
করোনা কবে যাবে, আদৌ যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নাজমুল বলেন, ‘জানি না আবার কবে খুলনায় ফিরতে পারব’। মির্জাপুর রোডের ছাত্রী মেসের বাসিন্দা পাইওনিয়র সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী শায়লা তাবাচ্ছুম বলেন, সাতক্ষীরা থেকে খুলনায় লেখাপড়া করতে এসেছেন তিনি। খুলনায় আসার পর একটা কোচিং সেন্টারে ইংরেজি ক্লাস নিতেন। আর দুইটা টিউশনি করতেন। বাড়ি থেকে তাই কোন কিছু আনার প্রয়োজন হত না। কিন্তু এখন আর কোনো উপায় নেই। বাবা-মা বাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন আরও আগে। কিন্তু তিনি থেকে গেছেন আরও কিছুদিন।
নগরীর একাধিক কোচিং সেন্টার মালিক বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো অনেক ছাত্রছাত্রীর আয়ের একটা বড় উৎস ছিল। কিন্তু তা বন্ধ থাকায় কোচিং মালিকরাই এখন মহা বিপদে রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কোচিং সেন্টার মালিক বলেন, ‘খুলনার প্রায় ৯৫ ভাগ কোচিং সেন্টার ভাড়া বাড়িতে। কোনো আয় না থাকলেও গত কয়েক মাস ভাড়া দিতে হচ্ছে। ফলে অনেক কোচিং সেন্টারও বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা প্রকোপ না কমলে কি পরিস্থিতি হবে তা বলা মুশকিল’।
আলমগীর হান্নান/এমআরএম