আগাম বন্যায় নৌকা বিক্রির ধুম
যমুনা নদী বিধৌত সিরাজগঞ্জ জেলার নদী তীরবর্তী উপজেলা শাহজাদপুর। যমুনায় পানি বাড়ায় উপজেলার কৈজুরীতে জমে উঠেছে নৌকা কেনাবেচার হাট। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল হলেও শাহজাদপুরের নদী পাড়ের মানুষের বর্ষার পরও অনেক দিন নৌকায় চড়েই চলাফেরা করতে হয়। বন্যা কবলিত মানুষের সহজে পারাপারে ব্যবহার হয়ে থাকে নৌকা।
শুক্রবার দিনভর যমুনা নদী ও নদী তীরবর্তী উপজেলার কৈজুরী মাদরাসা মাঠে দেখা মেলে এ নৌকার হাটের। ছোট, বড় ও মাঝারি নৌকা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। নৌকা ছাড়াও নৌকার লগি বৈঠা নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের। এ নৌকা এবং লগি বৈঠা ক্রয় করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন ক্রেতারা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এ নৌকা বেচাকেনা।
৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা মূল্যের নৌকা বেচাকেনা হচ্ছে এ হাটে। বন্যা এলেই প্রতি বছর সপ্তাহে একদিন বসে এ নৌকার হাট। নিত্যনতুন নৌকা তৈরি করে বেচাকেনা হয় এ হাটে।
যমুনা, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসাগর আর গোহালা নদীর মতো বেশ ক’টি নদী শাহজাদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান থাকায় অনেক বছর আগে থেকেই কৈজুরীতে নৌকার হাট বসে আসছে। কালের বিবর্তনে কোষা, বজরা, গয়নার নৌকার বিলুপ্তি ঘটলেও কৈজুরীতে ডিঙি নৌকার হাট এখনও টিকে আছে। শাহজাদপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে যমুনা নদীর তীরে কৈজুরীতে নৌকার পসরা সাজিয়ে হাট বসছে এখনও। কৈজুরীতে সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার হাট বসলেও নৌকার হাট বসে শুক্রবার। হাটে বিক্রির জন্য প্রায় কয়েক শতাধিক ডিঙি নৌকা আনা হয়।
বানতিয়ার চর হতে হাটে আসা নৌকা ক্রেতা আবু সামা জানান, যমুনা তীরবর্তী হওয়ায় আষাঢ়ের প্রথমেই বাড়ির চারপাশে বন্যার পানিতে থই থই করে। এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে যেতে নৌকাই একমাত্র বাহন। আরও আগেই নৌকা কেনা লাগতো সময়ের অভাবে দেরি হয়ে গেলো।
চর কৈজুরী গ্রামের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর জানান, বর্তমানে গ্রামগঞ্জে রাস্তাঘাট হওয়ায় এবং বর্ষার পর নদী পথ কমে যাওয়ায় শুধু বর্ষা মৌসুমে নৌকা বিক্রি ভালো হয়। বছরের অন্য সময় ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। নৌকার ব্যবসা এখন অনেকটাই মৌসুমী ব্যবসা হয়ে গেছে।
নৌকা বিক্রেতা গুপিয়াখালী নতুন পাড়া গ্রামের কোরবান আলী জানান, নৌকা বিক্রি তাদের পৈত্রিক ব্যবসা। বাড়িতেই তাদের কারখানা রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই কিশোর বয়সে বাবার সঙ্গে নৌকা বিক্রি করতে তিনি কৈজুরী হাটে আসতেন। তখন ১২ হাত লম্বা একটি ডিঙি নৌকা ৬শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় সাত হাজার টাকায়। বর্ষায় আগের দিনে ডিঙি নৌকার কদর বেশি ছিল। এখন সড়ক পথে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় নৌকার কদর কমে গেছে। আগের দিনে সারা বছর নৌকার চাহিদা থাকত। তাই বিক্রি ভালো হত। বর্তমানে ব্যবসা খুবই মন্দা। মিস্ত্রির মজুরি অনেক বেশি। পৈত্রিক ব্যবসা ছাড়তেও পারছি না। লাভ কম হলেও ব্যবসা ধরে রেখেছি।
ডায়া বাজারের নৌকা তৈরির কাঠ কারখানার মালিক আব্দুর রাজ্জাক জানান, কাঠমিস্ত্রিদের মজুরি ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় নৌকার দাম বেড়েছে। প্রতিটি ডিঙি নৌকার জন্য একজন মিস্ত্রিকে ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। তারপরও এ বছর আগাম বন্যায় নৌকার অডার্র ভালোই পাওয়া যাচ্ছে।
কৈজুরী হাটের ইজারাদার জানান, পাবনার বেড়া, প্যাচাকোলা, শৈলজানার চর এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, চরকৈজুরী, পাঁচিল, জামিরতা, গুদিবাড়ি রতনদিয়া ধীতপুর থেকে বহু মহাজন ডিঙি নৌকা বিক্রির জন্য এ হাটে নিয়ে এসেছেন।
কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার কৈজুরীতে নৌকার হাট বসে। হাটে বিক্রির জন্য শতাধিক ডিঙি নৌকা আনা হয়।
তবে নৌকার হাট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নদীর নাব্য সংকটের কারণে বর্ষার পরপরই নদী পথ হারিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধান করা দরকার।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/পিআর