কুমিল্লায় বাড়িতে ঢুকে সাংবাদিককে কুপিয়ে জখম

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০২:৪৪ পিএম, ০৫ জুলাই ২০২০

সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে নিজের ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হামলার শিকার হয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের মুরাদনগর উপজেলা প্রতিনিধি শরিফুল আলম চৌধুরী। হামলার সময় তাকে হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। কুপিয়ে তার মাথা ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। তাকে রক্ষা করতে এসে রক্তাক্ত হয়েছেন শরীফের মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও মা। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন স্থানীয় দারোরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া।

শরীফের হাত-পা ভেঙে দেয়ায় তাকে আজ রোববার বিকেলের মধ্যেই ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

এর আগে শনিবার দুপুরে ওই উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের কাজিয়াতল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে মুরাদনগর হাসপাতাল এবং পরে সন্ধ্যায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরীর অভিযোগ, এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়ার নির্দেশে তার বাহিনী ঘটিয়েছে। তিনি বাদী হয়ে চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।

ঘটনার পর চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করে আজ দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলম।

সাংবাদিক শরিফুলের বাবা ও মামলার বাদী আহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে শরিফুল বিভিন্ন সময় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহানের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আমার ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছিল। এ নিয়ে ফেসবুকেও একাধিকবার তার নিরাপত্তাহীনতার কথা প্রকাশ করে শরিফ। এছাড়া বিশেষ একটি মহলের ইন্ধনে শরিফের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। এতে সে নিজেকে অনিরাপদ ভেবে এক মাস বাড়ির বাইরে ছিল। গত সপ্তাহে সে বাড়ি আসে।

শরীফের বাবা আরও জানান, শরিফ বাড়িতে আছে এমন খবর পেয়ে শনিবার (৪ জুলাই) দুপুরে চেয়ারম্যান শাহজাহানের নির্দেশে তার সশস্ত্র বাহিনী বাড়িতে ঢুকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জোরপূর্বক শরিফকে টেনে-হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে উঠানে আনে। তারা দা দিয়ে কুপিয়ে, হাতুড়ি ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে তার দুই হাত ও পা ভেঙে দেয়। এ সময় দা দিয়ে তার মাথায় কোপ দিলে মগজের কিছু অংশ বেরিয়ে আসে।

আমি ও তার মা তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে রামদা দিয়ে আমার ডান হাতে কোপ দেয় এবং রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এ সময় তারা শরিফের মায়ের বাম হাত ভেঙে দেয়। প্রাণে বাঁচার জন্য আমরা চিৎকার করলেও চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি। পরে তারা চলে যায়।

ঘটনার অনেকক্ষণ পর শরীফ রক্তাক্ত অবস্থায় উঠানে পড়ে থাকে। পরে শরিফকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

সাংবাদিক শরিফের বোন সুলতানা চৌধুরী মুন্নী বলেন, ‘তারা ঘরে ঢুকে আমাকে জাপটে ধরে কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। আমি হাতে কামড় দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছুটে অন্য বাড়িতে গিয়ে আত্মরক্ষা করি।’

কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরীফের সঙ্গে থাকা তার চাচাতো ভাই নাজমুল জানান, শরীফের অবস্থা আশঙ্কাজনক, শরীরে প্রচুর রক্তের প্রয়োজন। সকাল থেকে এবি পজিটিভ রক্ত দেয়া হচ্ছে। তাকে ডাক্তাররা ঢাকায় নিতে বলেছেন, রক্ত দেয়া শেষ হলে বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় নেয়া হবে।

এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকরা ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তারা সোমবার মানববন্ধন করবেন বলে জানিয়েছেন।

মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় যারা সরাসরি জড়িত ও নেপথ্যে ইন্ধন দিয়েছেন সবাইকে চিহ্নিত করে গ্রেফতারের জন্য আমরা আগামীকাল মানববন্ধন থেকে দাবি জানাব।

মুরাদনগর থানার ওসি একেএম মনজুর আলম বলেন, ‘আমি নিজে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে আহত সাংবাদিক শরিফকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান শাহজাহানকে গ্রেফতার করার পর আজ আদালতে পাঠিয়েছি। অপর আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

কামাল উদ্দিন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।