৩৮তম বিসিএসে অষ্টম হাওরের মেয়ে তনুশ্রী

মোসাইদ রাহাত
মোসাইদ রাহাত মোসাইদ রাহাত , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি সুনামগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৭:২৫ পিএম, ০১ জুলাই ২০২০

৩৮তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে অষ্টম হয়েছেন ডা. তনুশ্রী তালুকদার। তিনি হাওর অঞ্চলখ্যাত সুনামগঞ্জ শহরের মেয়ে। বিসিএস ক্যাডার হয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন তিনি। বর্তমানে ডা. তনুশ্রী তালুকদার সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।

শহুরে জীবনে বেড়ে ওঠা তনুশ্রী তালুকদারের পড়াশোনা শুরু সুনামগঞ্জ পৌর শহরের সুনামগঞ্জ শহর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ায় প্রাথমিকে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। সিলেট বিভাগে মেধাতালিকায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। পরে এ সাফল্যকে পুঁজি করে এগিয়ে যান তিনি।

শহরের সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (এসসি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি হয়ে নবম শ্রেণিতে নেন বিজ্ঞান বিভাগ। পড়াশোনা চালিয়ে যান নিজের মতো করে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পান গোল্ডেন জিপিএ-৫ এবং মেধাতালিকায় সিলেট বিভাগে হন ১০ম। এরপর ভর্তি হন সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে। বাবা পেশায় শিক্ষক হওয়ায় বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন সহযোগিতা। কলেজ জীবনেও তিনি সাফল্য ধরে রাখেন। এইচএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন এবং মেধাতালিকায় সিলেট বিভাগের মধ্যে ৫ম স্থান অধিকার করেন।

tonusri-2

বাবার সঙ্গে ডা. তনুশ্রী তালুকদার

ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখেছেন ডাক্তার হওয়ার। সেই সময় থেকেই নিজেকে মেডিকেলে পড়ার জন্য প্রস্তুত করেন। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পান সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তার হয়ে মানুষকে সেবা দেয়ার প্রত্যয়ে সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেন পড়াশোনা।

ডা. তনুশ্রী তালুকদার জানান, তার সব সাফল্যের কৃতিত্ব বাবা রবীন্দ্র কুমার তালুকদারের। বাবার অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সব কিছু অর্জন করতে পেরেছেন। তিনি তার মেসোর বাড়িতে থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কোনো রকমের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হলেও ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েই মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন। তার বাবা চাইতেন তিনি বিসিএস ক্যাডার হবেন। তিনি তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন। বাবা ও মা দুজনই তার সাফল্যে অনেক খুশি।

তনুশ্রী তালুকদার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন ২০১৯ সালে। তার স্বামী সুরজিৎ পুরকায়স্থও একজন চিকিৎসক। বিসিএসের প্রস্তুতিতে স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সবার আগে। তার এ সাফল্যে স্বামীও খুশি। ডা. তনুশ্রী তালুকদার বিসিএসের জন্য দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছেন।

jagonews24

জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় ডা. তনুশ্রী তালুকদারের স্বামী ডা. সুরজিৎ পুরকায়স্থের। তিনি বলেন, ‘আমি তনুশ্রীর এ সাফল্যে অনেক খুশি। সে অনেক কষ্ট করেছে যার জন্য আজকে তার এই কৃতিত্ব। আমি ও আমার পরিবার অনেক খুশি হয়েছি। সে যেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারে এই কামনা করি।’

ডা. তনুশ্রী তালুকদার বলেন, বাবা ছোটবেলা থেকে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন আমি বিসিএস দেব। সেই স্বপ্নটা বাস্তব করতেই আমার বিসিএস দেয়া। আমি ৩৮তম এবং ৩৯তম বিসিএস দুটোই দিয়েছি এবং দুটোতেই কৃতকার্য হয়েছি। তবে ৩৮তম বিসিএসে আমি চিকিৎসা ক্যাডারে অষ্টম হয়েছি। যার পুরোটা কৃতিত্ব আমি আমার বাবা ও স্বামীকে দেব। কারণ তারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছেন। বাবা ছোটবেলা থেকেই আমাদের কোনো রকম কষ্ট হোক সেটা চাননি। আমি আমার এই সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সেবা করে যাব সবসময়।

তিনি বলেন, বিসিএস দেয়ার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই পড়াশোনায় বেশি মনোযোগী হতে হবে। আমরা ডিজিটাল হচ্ছি। আমাদের মোবাইল-কম্পিউটার আছে। সেগুলোর ব্যবহার কম করে পড়াশোনা করতে হবে। তবেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে।

আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।