পঞ্চগড়ে শিশু মৃত্যুর হার বেড়েছে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ২৭ জুন ২০২০
ফাইল ছবি

চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত এলাকার নদী, নালা, খাল ও পুকুরে ডুবে আশঙ্কাজনকভাবে শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব শিশুর বয়স ৯ মাস থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে। প্রত্যন্ত এলাকায় এ দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

এতে প্রতিনিয়ত খালি হচ্ছে অসংখ্য মায়ের কোল। পারিবারিক অসচেতনতার জনই এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সমাজকর্মীরা।

গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানি দুর্ঘটনায় ৯ শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অভিভাবকদের অসচেতনতার জন্য অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

দিনের অধিকাংশ সময় পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পেশার কাজে বাইরে এবং গৃহবধূরাও বাড়ির নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ সময় অবুঝ শিশুরা খেলতে খেলতে কোনোভাবে বাড়ির পাশে পুকুর বা খালের পানি পড়ে মারা যাচ্ছে। কখনও আবার ওয়াসরুমে ব্যবহৃত বালতির পানিতে পড়েও শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

চলতি জুনের মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এক বিশেষ সুবিধা বঞ্চিত (প্রতিবন্ধী) ব্যক্তিসহ ১০ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। এদের মধ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলায় চার শিশুসহ পাঁচজন, উপজেলা সদরে চার এবং আটোয়ারী উপজেলায় এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের মধ্যে ২৯ শে মে তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝগ্রামে তিন বছরের শিশু মুছাব্বির বাড়ির পাশে পুকুরের পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়, ১০ জুন একই ইউনিয়নের চার বছরের আরিফ হোসেন খেলার সময় পুকুরের পানিতে পড়ে মারা যায়।

একই দিন আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া এলাকায় তিন বছরের সিয়াম হোসেনের নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। ১৩ জুন সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের ভান্ডারু গ্রামে তাবাসসুম জাহান মিম সাত বছরের আরেক শিশুর নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।

১৫ জুন উপজেলা সদরের চাকলাহাট ইউনিয়নের নুনিয়া পাড়ায় ৫ বছরের তুষার চন্দ্র রায়েরও নালার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। ১৭ জুন একই উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মিঠাপুকুর এলাকার ৯ মাস বয়সী শিশু নুরী আক্তারের বাড়ির বালতির পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়।

১৮ জুন উপজেলার সদরের মাহান পাড়ায় আড়াই বছরের শিশু আরাফাত ইসলাম রাফি খেলার সময় পুকুরের পানিতে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ১৯ জুন তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের বিড়ালজোত এলাকার আড়াই বছরের মেয়ে লামিয়া আক্তারের পুকুরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ ২৪ শে জুন একই উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের সালাফীগছ এলাকার তিন বছরের রাজিয়া খাতুনও পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। এদিকে গত ৮ জুন তেঁতুলিয়া উপজেলার বালাবাড়ি গ্রামের রাজিউল ইসলাম বাঙালি (৪৭) নামে এক বিশেষ সুবিধা বঞ্চিত (প্রতিবন্ধী) ব্যক্তি নদী ডুবে মারা যান। তিনি নদীতে গরুকে গোসল করাতে গিয়েছিলেন

পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও স্থানীয় সমাজকর্মী হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ বলা যায় মায়েদের অসচেতনতা। শিশুদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু ঠেকানোর জন্য আমাদের মায়েদের আরও সাবধান হতে হবে। গ্রামের মায়েরা স্বাভাবিক কারণে বাড়ির বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। অনেক সময় তারা বাড়ির আঙিনা বা বাড়ির বাইরে শিশুদের একাই খেলতে দেন। সেক্ষেত্রে তারা যদি শিশুদের কোমড়ে বা গলায় ঘুংরু (নরাচড়া করলে বেজে উঠার এক প্রকার যন্ত্র) বেঁধে দেন। তাহলে তারা শিশুদের আকস্মিক অনুপস্থিতি বুঝতে পারবেন। এক সময় এটার ব্যবহার ছিল। এছাড়া বাড়ির আশপাশে পুকুর বা খাল থাকলে সেগুলোতে বাঁশের বেড়া দেয়া উচিত। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালাতে হবে।

সফিকুল আলম/এমএএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।