করোনা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বরিশালে বিক্ষোভ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার রোধে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো, নমুনা পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি বন্ধ, রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতসহ আট দফা দাবিতে বরিশাল নগরীতে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন ) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।
দলটির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী কর্মসূচিতে যোগ দেন। তারা সড়কে বসে পড়েন। এ সময় সড়ক দিয়ে যানবহন চলাচল বন্ধ থাকে। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সড়ক থেকে বাসদ নেতাকর্মীদের সরানোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধার মুখে নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
সমাবেশে জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, দেশের আট বিভাগের মধ্যে করোনা চিকিৎসার দিক থেকে বরিশাল বিভাগের অবস্থান সর্বনিম্নে। করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাব ঢাকায় ৩৮টি, চট্টগ্রামে নয়টি, রংপুর ও ময়মনসিংহে দুটি। অথচ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার জন্য মাত্র একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে।। দক্ষ টেকনিশিয়ান না থাকায় সেখানে নমুনা পরীক্ষর জন্য রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যার দিক থেকেও বরিশাল সর্বনিম্নে। আইসিইউ বেড ১৮টি হলেও আইসিইউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাত্র একজন। বরিশাল জেলায় সরকারি-আধা সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ক্লিনিক-হাসপাতাল থাকলেও শেবাচিম ছাড়া আর কোথাও করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এসব কারণে চিকিৎসা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হলেও গরিবের ত্রাণে চলছে লুটপাট। করোনা সঙ্কট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে কোনো ধরনের বাণিজ্য করতে দেয়া যাবে না।
ডা. মনীষা বলেন, বুধবার সংবাদ সম্মেলন আট দফা দাবি উত্থাপন উপস্থাপন এবং সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর তাদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে এ কর্মসূচি সফল করেছি আমরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদের জেলা আহ্বায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুম্মন। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ পাঁচ মাস থেকে করোনা মহামারি মোকাবিলার প্রস্তুতির কথা বলে আসছি। আমরা বরিশালে ১০০০ শয্যার করোনা ইউনিট চালুর দাবি করেছি, দাবি করে এসেছি ১০০ শয্যার আইসিইউ বেডের। পিসিআর ল্যাবের সংখ্যা বাড়িয়ে রোগীদের হয়রানি এবং দীর্ঘসূত্রতা কমানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু সরকার কোনো দাবি বাস্তবায়ন না করায় সড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হলাম। মানুষকে বাঁচানোর এই দাবিগুলো অবিলম্বে মেনা না নেয়া হলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো আমরা।
অবরোধ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার, জাসদ বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফুল হক মুন্না, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সদস্য আরিফুর রহমান মিরাজ, বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এলবার্ট রিপন বল্লভ প্রমুখ।
এছাড়া সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি জোহরা রেখা, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর শাখার প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক বিজন শিকদার, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের নেতা মো. জসিম, সোনারগাঁ টেক্সটাইল মিলসের শ্রমিক নেতা নুরুল হক ও এংকর সিমেন্ট ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা শরিফুল ইসলাম।
বাসদের আট দফা দাবিগুলো হলো- পিসিআর ল্যাব বৃদ্ধি করে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিত করা, করোনা রোগীদের জন্য ১০০ শয্যা ও ১০০ আইসিইউ বেড চালু, করোনা রোগীদের বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ, লকডাউন হওয়া বাসা-বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া, চিকিৎসক-সাংবাদিক-পুলিশসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের ঝুঁকিভাতা প্রদান, এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ ও বাড়ি-মেস ভাড়া মওকুফ, ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারসহ সব বিল মওকুফ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই বন্ধসহ বকেয়া বেতন প্রদান।
সাইফ আমীন/এএম/এমকেএইচ