গ্রাম ছাড়ছেন লালমনিরহাটের নিম্ন আয়ের মানুষ


প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ২৪ অক্টোবর ২০১৫

আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। বিলাসিতা দূরের কথা দৈনন্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। এলাকায় কাজকর্ম না থাকায় নিরুপায় হয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো কাজের সন্ধানে ছুটে চলছেন শহরে।

এমনি নিম্নবিত্ত পরিবারের এক সদস্য লালমনিরহাটের রবিউল ইসলাম। দারিদ্র্যতা জয়ে প্রতি বছর প্রিয়জনদের কাঁদিয়ে স্বপরিবারে তিনি নরসিংদীর মনোহরদী থানায় বিভিন্ন ইটভাটার কাজে যান। এমনিভাবে লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পরিবার নিয়ে ছয় মাসের জন্য ইটভাটার কাজে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছেন।


শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বড়খাতা রেলগেট এলাকায় দেখা মেলে শতাধিক পরিবার শিশু সন্তানদের নিয়ে ছুটছেন ইটভাটায়। তাদের নিয়ে যেতে এসে দাঁড়িয়ে থাকে ঢাকাগামী বাসগুলো। পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকছে কাঁথা, বালিশ, হাড়ি-পাতিল, লাকড়ি, মুরগির খাঁচাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবর মাসে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কাকিনা, আদিতমারী, বাউরা এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো স্বপরিবারে এভাবেই ছুটে যান ইট ভাটায়। এসব পরিবারগুলো জীবন বাঁচাতে ইটভাটায় নিয়োজিত সর্দারের নিকট থেকে আগাম টাকা নিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ জন প্রতি ১৫ হাজার টাকা। আবার গ্রুপভিত্তিক আশি থেকে এক লাখ টাকাও অগ্রিম নিয়ে থাকেন তারা।


এসব পরিবার ইটভাটাগুলোতে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করেন। প্রতিটি গ্রুপে চার সদস্য মিলে দৈনিক পাঁচ হাজার ইট তৈরি করে থাকেন। হাজার প্রতি একশত ত্রিশ টাকা করে মজুরি পান তারা।

ইটভাটায় কাজে গেলে এ টাকা আর পরিশোধ করতে হয় না, তাই গ্রামের বেশি ভাগ পরিবার টাকা নিয়ে ইট তৈরির কাজে যান। ছয় মাস শেষে হলে পরিবারগুলো পর্যায়ক্রমে আবার গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। নরসিংদীতে ইটভাটায় কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের ছেলে-মেয়েরা অধিকাংশই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফলে এসব পরিবারের কয়েকশত শিক্ষার্থী বর্তমানে স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, বড়খাতা ইউনিয়নের ১, ২, ৩নং আদর্শগ্রাম, দোলাপাড়া, ফকিরপাড়া, পূর্ব সাড়ডুবী, গড্ডিমারী, সানিয়াজান, সিংঙ্গীমারী এলাকার বেশির ভাগ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে সপরিবার ইটভাটায় কাজে যাচ্ছেন।

ইটভাটায় কাজে যাওয়া উত্তর সিংঙ্গীমারি গ্রামের আব্বাস আলী (৪০) জাগো নিউজকে বলেন, আমার অভাবের সংসার স্ত্রীসহ তিন ছেলে শুভ ( ৮), জুয়েল (১০) মিলন (১২) সকলে মিলে এক সঙ্গে ইটভাটায় যাচ্ছি। পাঁচজনের সংসার ইটভাটায় কাজে যাওয়ার জন্য সর্দারের কাজ থেকে আগাম ৪০ হাজার টাকা নিয়েছি। আর সে টাকা কাজ করে পরিশোধ করতে হবে।


ইটভাটার সর্দার ফারুক মিয়া (৩০) জাগো নিউজকে জানান, আমার মাধ্যমে প্রায় তিনশত লোক ভাটায় যাবেন। প্রত্যেক পরিবার ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে আগাম দিয়েছি। তাদের টাকা পরিশোধ করতে হয় না। এভাবে প্রতি বছর লোকজনকে ইটভাটায় নিয়ে যাই।

বড়খাতা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবেদ আলী জাগো নিউজকে জানান, বিভিন্ন ইটভাটায় প্রায় পাঁচ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করেন। ছয় মাস পর আবার তারা নাড়ির টানে এলাকায় ছুটে আসেন।


বড়খাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তাফা জামান সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার এসব পরিবারগুলো কাজের সন্ধানে ইটভাটায় কাজে যাওয়ায় এলাকায় অভাব-অনটন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

রবিউল হাসান/এআরএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।