সরকারের বিশেষ ট্রেন চালুতে ক্ষতি কমেছে ফল ব্যবসায়ীদের

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ১৯ জুন ২০২০

ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হওয়ার সময় শিলাবৃষ্টি। পেকে ওঠার আগেই আম্ফানের তাণ্ডব। করোনাভাইরাস আতঙ্কে ঘরবন্দি মানুষ। চলতি মৌসুমে একের পর এক দুর্যোগ গেছে লিচুর উপর দিয়ে। ফলে মৌসুমের শুরুতেই লিচুর দাম নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন ‘লিচুর রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর চাষিরা। কিন্তু বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় লিচু নিয়ে তাদের সেই দুশ্চিন্তা এখন কেটে গেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সরকার বিশেষ ট্রেন চালু করায় করোনার মাঝেও অনেক ক্ষতি কমেছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়। উপজেলায় দেশি, বোম্বাই ও চায়না-৩ নামে তিন জাতের লিচুর ফলন হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার লিচু ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখানে বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ১২৯ কোটি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩২৪ কোটি টাকা।

উপজেলার ৮-১০ জন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, ফাল্গুনে লিচুর ফুল ফোটে। চৈত্রে তৈরি হয় গুটি। বৈশাখের মাঝামাঝি লিচুতে রঙ ধরতে শুরু করে। জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহে লিচুর রঙে রঙিন হয়ে ওঠে ঈশ্বরদী উপজেলা। লিচু বাগানে ফুল ফুটতেই বেচাকেনা শুরু হয়। ফুল থেকে গুটি, গুটি থেকে পরিপক্ক লিচু। যত বড় হবে, লিচুর দাম তত বাড়বে। কয়েক ধাপে চলে হাতবদল।

Lichu

এবারে করোরাভাইরাস আতঙ্কে মৌসুমের শুরুতেই বেচা-কেনায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়। বেপারিরা না আসতে পারায় অধিকাংশ বাগান অবিক্রিত থাকে। এতে মৌসুমের শুরু থেকেই লিচু নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা। তবে শেষ পর্যন্ত সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় লিচু বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয়নি চাষিদের। মিলেছে ভালো দাম। ফলে দুর্যোগে কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও লিচু নিয়ে কর্মব্যস্ত ঈশ্বরদীর অধিকাংশ মানুষ। পাবনা জেলা সদর থেকে ঈশ্বরদীর পাকশী সড়ক ধরে যতদূর এগোনো যায় ততদূরে শুধু লিচুর বাগান। পুরোদমে লিচু বিকিকিনি চলছে উপজেলার ছলিমপুর, জয়নগর, আওতাপাড়া, সাহাপুর, দাশুড়িয়া মোড়ে। ট্রাক ও ভ্যানে লিচু যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়।

কয়েকজন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে বাজারে চাহিদা ও ভালো দাম রয়েছে। বাগানেই প্রতি ১০০ লিচু ১৮০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এ লিচু ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

ছলিমপুর গ্রামের বাগান মালিক কিতাব মন্ডল জানান, তিনি প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে লিচু আবাদ করেন। গত মৌসুমে এসব জমির বাগান থেকে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু চলতি মৌসুমে বাগানের ৪৫ শতাংশ লিচু নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার তিনি অর্ধেক দাম পেয়েছেন।

উপজেলার জয়বাংলা নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু জাতিয় কৃষি স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত কৃষক নুরুন্নাহার বেগম জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে কিভাবে লিচু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করবেন তা নিয়ে প্রথমে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তবে সরকার অনলাইনে ফল বিপণনের সুবিধা করে দিলেন। ট্রেনে বিশেষ বগি লাগিয়ে অল্প ভাড়ায় আম-লিচু পরিবহনের ব্যবস্থা করায় তাদের ক্ষতি কম হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহমুদা মোতমাইন্না জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে এটা ঠিক। তবে গত বছরের চেয়ে এবার লিচুর দাম কিছুটা বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।