আম্ফান শেষ হলেও, ঘর থেকে পানি নামেনি তিন শতাধিক পরিবারের
বাগেরহাটের শরণখোলায় শহর রক্ষাবাঁধের ভেতরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রাখায় উপজেলা সদরের বায়েন্দা বাজারে জলাবদ্ধতায় তিন শতাধিক পরিবার দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। এসব পরিবারের ঘরেও পানি উঠেছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শুরু। এরপর কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় এখন এলাকাটি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।
অথচ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখে রায়েন্দা শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণের ফলে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আগে একটি ড্রেন থেকে এলাকার পানি নেমে যেত খালে। রায়েন্দ শহর রক্ষাবাঁধের কারণে ওই ড্রেনটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে জলাবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানুষ ঘর থেকে নামতে পারছে না। ঘরের মধ্যেও পানি জমে আছে। বাইরের টয়লেটগুলো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। মল-মূত্রের পানিতে সবদিক একাকার। পঁচা দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসে। স্বাভাবিক কাজকর্ম-চলাচলও করতে পারছে না মানুষ।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দায় পানিবন্দি অবস্থায় থাকা প্রবাসীর স্ত্রী রুমান বেগম জানান, বাইরে পানি, ঘরের মধ্যেও পানি ওঠায় বাচ্চাদের নিয়ে সব সময় আতঙ্কে রয়েছি। কখন না জানি পানিতে পড়ে যায় ছোট ছেলে-মেয়েরা! সাপ, জোঁক, কেঁচোর উৎপাৎতো আছেই। রাতে ঘুমোতে ভয় লাগে। চুলায় পানি জমে থাকায় রান্না করার কোনো উপায় নেই। দুর্বিসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে, যা বলে বোঝানো যাবে না।
রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের পেছন থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত এ এলাকার মধ্যে বসবাসকারী তিন শতাধিক পরিবার প্রায় এক মাস ধরে রুমানা বেগমের মতো এভাবে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এসময় ফারুখ খান নামে এক গৃহকর্তা জানান, তার ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। রান্না বন্ধ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। এ অবস্থায় স্ত্রী-সন্তানদের তিনি শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন।
রহিমন বেগমকে দেখা যায় দুপুরের রান্না করছেন। চুলায় যাতে পানি না যায় এজন্য চুলার চারপাশে মাটির বেড়ি দিয়েছেন তিনি। ওই এলাকার বাসিন্দা মিলন হাওলাদার, হিরু হাওলাদার, রফিক খান জানান, তাদের প্রত্যেকের ঘরে ছোট ছোট শিশু রয়েছে। ঘরের বাইরে কোমর সমান পানি। বাচ্চাদের নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। বেখায়ালে কখন না জানি দুর্ঘটনা ঘটে যায়! ঘরের মধ্যে কেঁচো কিলবিল করে। পানিতে তলিয়ে থাকায় টয়লেটে যাওয়ারও ব্যবস্থা নেই। পঁচা পানিতে নামলেই চুলকানি শুরু হয়ে যায়। আগে একটি ড্রেন থেকে পানি নামতো। তাও বেড়িবাঁধের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আমাদের পঁচা পানিতে ডুবে মরতে হচ্ছে।
গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর প্রায় এক মাস ধরে আমরা এই এলাকার তিন-চারশ পরিবার পানিবন্দি রয়েছি। অথচ আমাদের দুর্ভোগ লাঘবে কেউ এগিয়ে আসছে না। এভাবে জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকলে এলাকায় পানিবাহিত রোগ-ব্যধি দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।
রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জাগো নিউজকে বলেন, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) আওতায় নির্মিত এ রায়েন্দা শহর রক্ষাবাঁধে পানি নিষ্কাশনের জন্য ১০টি ড্রেন করার কথা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বার বার বলার পরও তা করছে না। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পাইপ বসিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করা হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরদার মোস্তফা শাহিন জাগো নিউজকে বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের লোকেরা দায়ী। ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমাধান করে তবেই বাঁধের কাজ করা উচিত ছিল। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয় বোর্ডের (বাপাউবো) উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সিএইচডব্লিউই’ নামের চায়নার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধসহ রায়েন্দা শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করছে। কাজের প্রায় ৮০ ভাগ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বর্ষা মৌসুম চলছে। বর্ষার তিন মাস কোনো কাজ হবে না। ঠিকাদার কম্পানির লোকেরা কাজ কন্ধ করে অনেকেই চায়না চলে গেছে। তারপরও যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
শওকত বাবু/এমএএস/এমকেএইচ