চোখের জলে জনতার মেয়রকে শেষ বিদায়
জনতার মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের কাছ থেকে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে দূরে রাখতে পারেনি করোনাভাইরাসের ভয়। করোনাকে উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের চোখের জল, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় শেষ বিদায় জানানো হলো সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে।
সোমবার (১৫ জুন) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মানিকপীর টিলায় দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মা-বাবার কবরের পাশে কামরানকে দাফন করা হয়।
এর আগে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা।
জনসমাগম এড়াতে কামরানের জানাজার সময়সূচি ঘোষণা না করা হলেও সকাল থেকে বাসভবন ছড়ারপারের সুগন্ধায় নেতাকর্মীসহ লোকজন আসতে শুরু করেন। প্রিয় নেতার মরদেহ বাসায় আসার পর হাজারো নেতাকর্মী কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাসায় মরদেদের গোসল শেষে খাটিয়ায় করে নিয়ে যাওয়া হয় ছড়ারপার জামে মসজিদে।
বাদ জোহর ছড়ারপার জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প সংখ্যক লোক জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করেন। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এই মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তেন। প্রথম জানাজার পর দ্বিতীয় জানাজার জন্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মরদেহ মানিকপীর কবরস্থানে নেয়া হয়। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ জনসমাগম ছাড়াই দাফন করার নির্দেশনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের।
কিন্তু সেখানে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা-ভয় কাজে আসেনি। ভয়কে উপেক্ষা করে কামরানের জানাজায় ঢল নামে মানুষের। কামরানকে বলা হয় গণমানুষের নেতা। ‘নগরবাসীর প্রিয় নাম, বদরউদ্দিন কামরান’ স্লোগানও দিতেন তার অনুসারীরা। সোমবার কামরানের জানাজায় এই স্লোগানের সত্যতা মিলল শেষবার। কারণ তিনি ছিলেন জনতার মেয়র।
জানাজা শেষে জেলা আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কামরানের মরদেহে ফুল দেয়া হয়। এ সময় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জনতার মেয়রের জানাজায় জনতার ঢল :
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেকের স্বজনরাও কাছে যান না। মরদেহ ফেলে চলে যান। এমন খবর নিয়মিতই আসছে গণমাধ্যমে। এছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তির মরদেহ জনসমাগম ছাড়াই দাফন করা হয়। কিন্তু বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা-ভয় কাজে আসেনি। ভয় উপেক্ষা করে কামরানের জানাজায় ঢল নামে মানুষের।
সোমবার (১৫ জুন) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়। এতে করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতির প্রথম জানাজার নামাজ শেষে মানিকপীর টিলায় দ্বিতীয় জানজার নামাজেও জনতার ঢল নামে। নেতাকর্মীদের শব্দ করে কাঁদতে দেখা গেছে।
মানিকপীর টিলা ও আশপাশের রাস্তায় হাজারো জনতার ঢল নেমেছে। সবাই শেষবারের মতো বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মুখ বা তার শেষযাত্রা একটু নিজ চোখে দেখতে চেয়েছেন।
দলীয় নেতাকর্মী, ভক্তসহ সর্বস্তরের জনতার কান্নায় ভারী হয়ে উঠে মানিকপীর টিলা এলাকা। সেখানে স্বাস্থ্যধিধি মোতাবেক বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দ্বিতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
চোখের জলে ভাসছে কামরানের সুগন্ধা :
চারদিকে শোকের মাতম, আহাজারি আর চোখের জল। কামরানের সুগন্ধা ৬৫ বাসভবন আজ আহাজারিতে ভারী। গভীর শোকে স্তব্ধ সবকিছু।
সোমবার (১৫ জুন) রাত ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স কামরানের ছড়ারপারস্থ বাসায় প্রবেশ করে। অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ভেঙে পড়েন দলীয় নেতাকর্মী ও প্রতিবেশীরা। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকেই কামরানের বাসভবনে সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ এসে ভিড় জমাতে থাকেন। তাকে শেষবারের মতো দেখার জন্য ছুটে আসেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনের লোকজন ও সাংবাদিকসহ সব স্তরের মানুষ।
ছামির মাহমুদ/এএম/এমকেএইচ