কামরানের মরদেহ এক মিনিটের জন্য হলেও নগর ভবনে নেয়ার দাবি আরিফের
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রথম মেয়র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মরদেহ নগর ভবনে শেষবারের মতো অন্তত এক মিনিটের জন্য হলেও আনার দাবি জানিয়েছেন বর্তমান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সোমবার (১৫ জুন) সকালে তিনি জাগো নিউজকে এ দাবির কথা জানান।
এর আগে কামরানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে সকালে তার ছড়ারপারের বাসায় ছুটে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সেখানে তিনি সাবেক মেয়রের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।
২০০৩-২০০৮ মেয়াদে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালীন আরিফুল হক চৌধুরী সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। পরে ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে কামরানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।
কামরানের মৃত্যুতে মেয়র আরিফ গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশন ও নগর ভবনের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। তিনি দুবারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র। এর আগে তিনি পৌরসভার তিন বার কমিশনার ও একবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তাই বর্তমান নগরপিতা হিসেবে কামরানের মরদেহ অন্তত এক মিনিটের জন্য হলেও সিটি করপোরেশনে আনার দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে সাবেক মেয়র কামরানের মৃত্যুতে সিলেট সিটি করপোরেশনে তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। শোক কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সিসিকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর কালোব্যাজ ধারণ ও দোয়া মাহফিল। তিনদিনের শোক কমসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সিসিকের সব দাফতরিক কাজ বন্ধ থাকবে।
এর আগে রোববার (১৪ জুন) দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান।
সোমবার (১৫ জুন) সকাল ৭টার দিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে কামরানের মরদেহ নিয়ে সিলেটের পথে রওনা হন তার পরিবারের সদস্যরা। নগরের মানিকপীর টিলায় বাবা-মায়ের কবরের পাশে তার মরদেহ দাফন করা হবে।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির আহমদ জানান, বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মরদেহ প্রথমে ছড়ারপারস্থ বাসায় আনা হবে। এরপর ছড়ারপার জামে মসজিদে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ছোট পরিসরে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মানিকপীর টিলায় দ্বিতীয় দফায় জানাজা শেষে ওই গোরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে তাকে সরকারি নির্দেশনা মেনে দাফন করা হবে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন এবং গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের টানা দুবারের মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গত ৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরদিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শরীর আরও খারাপ হলে ৭ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৮ জুন কামরানের শরীরে প্লাজমা থেরাপিও দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে সিলেট পৌরসভার ৩ নং তোফখানা ওয়ার্ডের সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এরপর থেকেই রাজনীতিতে তার উত্থান শুরু। ১৯৬৮ এর উত্তাল সময়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি কামরানের। ১৯৭৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকা অবস্থায় সিলেট পৌরসভার সর্বকনিষ্ঠ কমিশনার হয়ে চমক দেখান তিনি। সেই থেকেই সিলেট পৌরসভার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে পড়েন। ১৫ বছর ছিলেন পৌরসভার কমিশনার। মাঝখানে প্রবাসে থাকায় একবার নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। ফিরে এসে ১৯৯৫ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন হলে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান কামরান। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বার কারাবরণ করতে হয় এই জনপ্রিয় রাজনীতিবিদকে। ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে লড়ে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে সর্বশেষ দুটি সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চোধুরীর কাছে হেরে যান তিনি।
ছামির মাহমুদ/আরএআর/এমকেএইচ