এক যোদ্ধার সেবায় নিয়োজিত আরেক করোনাযোদ্ধা

ফেরদৌস সিদ্দিকী ফেরদৌস সিদ্দিকী , নিজস্ব প্রতিবেদক রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১৫ জুন ২০২০

চলমান করোনাযুদ্ধে রাজশাহীতে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘুরে বেড়ানো মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে আসছেন তারা। আর এই কঠিন মুহূর্তে পুলিশসহ সাধারণ মানুষের চিকিৎসায় চিকিৎসকরা নিচ্ছেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি।

গত শুক্রবার রাজশাহী বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের এক আয়ার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এতেই পুলিশের চিকিৎসায় অংশ নেয়া চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে চিকিৎসকদের সুরক্ষায় সবধরনের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।

সূত্র বলছে, দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর করোনাযুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের জন্য আলাদা করোনা হাসপাতাল চালু হয় রাজশাহীতে। বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালকে ৩৩ শয্যার করোনা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে পুলিশ হাসপাতালের বহির্বিভাগ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের পুলিশ লাইন স্কুল ভবনে।

করোনা চিকিৎসায় পুলিশ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছে চারজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে চারটি দল। আরো চারজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন বহির্বিভাগে। করোনা সন্দেহ হলেও পুলিশ সদস্যরা আসছেন পুলিশ হাসপাতালে। করোনা শনাক্ত হলে এখানেই আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা চলছে। তবে পুলিশ হাসপাতালে নেই করোনা চিকিৎসায় অধিক জরুরি আইসিইউ সুবিধা।

সূত্র বলছে, রাজশাহীতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত ৫ মে জেলার তানোরে। থানার কনস্টেবল আলী হোসেন (৪২) ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী আব্দুল মালেকের (৩৩) করোনা শনাক্তের পর তাদের পুলিশ হাসপাতালে নেয়া হয়। করোনা জয় করে এরই মধ্যে কাজে যোগ দিয়েছেন দুজন।

korona

সর্বশেষ রোববার করোনা জয় করে পুলিশ হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন জেলা পুলিশ লাইন্সের এসএএফ শাখায় কর্মরত নারী কনস্টেবল রীমা খাতুন। গত ২৭ মে তার করোনা ধরা পড়ে। এরপর থেকেই পুলিশ হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন রীমা।

এরপর করোনা নিয়ে পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত এসএসপি মনিরুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান শেখ পুলিশ হাসপাতালে আসেন। এখন ভর্তি আছেন এই হাসপাতালেরই আয়া আসমানি আক্তার কাজল (৩৮)। গত শুক্রবার তার করোনা ধরা পড়ে। করোনা সন্দেহে এসেছেন আরো কয়েকজন। নমুনা সংগ্রহের ফল এলে হয় ভর্তি নয়তো ছাড়পত্র দেয়া হবে তাদের।

বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আসাদুজ্জামান আজাদ বলেন, শুক্রবার হাসপাতালের আয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এর তিন দিন আগে কোয়ারেন্টাইন শেষ করে কাজে ফেরেন তিনি। পরীক্ষায় করোনা শনাক্তের পর তাকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। করোনা শনাক্ত হওয়া অন্যরা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।

এ পর্যন্ত করোনা পরীক্ষায় পুলিশ হাসপাতলে ১১৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখনো প্রতিদিনই ৮ থেকে ১২ জনের করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় সাত দিন করে পালাক্রমে দায়িত্বপালন করছে চারটি দল। একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে দলে রয়েছেন একজন করে নার্স, ওয়ার্ড বয়, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, দারোয়ান এবং বাবুর্চি। টানা সাতদিন হাসপাতালে আলাদা থেকেই চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা। এরপর ১৪ দিন থাকছেন কোয়ারেন্টাইনে। এছাড়া আরো সাতদিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ফিরছেন কাজে।

দায়িত্বরত চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, বাড়তি জনবল না থাকায় করোনা চিকিৎসায় ঘনঘন আসতে হচ্ছে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের। এতে যেমন মানসিক অবসাদ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে করোনা ঝুঁকি। তাছাড়া সুরক্ষা সামগ্রীও অপ্রতুল। এছাড়া হাসপাতালের এক কর্মীর করোনা ধরা পড়ায় চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরাও রয়েছেন আতঙ্কে।

korona

জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, হাসপাতালে নয়, ওই আয়া করোনা সংক্রমতি হয়েছেন হাসপাতালের বাইরে। পরে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি যোগ করেন, করোনা মারাত্মক সংক্রামক। কী পুলিশ, কী চিকিৎসক এই পরিস্থিতিতে সবার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে পুলিশের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে।

এখনো আরএমপির কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হননি জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এনিয়ে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালকে ৩৩ শয্যার করোনা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও চিকৎসাকর্মী। কেবল সেখানে নেই আইসিইউ সুবিধা।

করোনাকালে পুলিশ সদস্যদের সুরক্ষায় নিজেদের করা গাইডলাইন অনুসরণ করছে আরএমপি। বিষয়টি নিশ্চিত করে গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, জনজীবনের নিরাপত্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে নগর পুলিশ। সবচেয়ে কম ফোর্স ব্যবহার করে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের বিষয়টিও রয়েছে তাদের পরিকল্পনায়। যারা সরাসরি জনগণের কাছাকাছি যাচ্ছেন তাদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, সার্বক্ষণিক টহল, চেকপোস্ট, অকারণে ঘোরাঘুরি করা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এর বাইরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সহায়তা করছে। রুটিন কাজও করছে সমান গুরুত্ব দিয়ে। ফলে এই পরিস্থিতিতে করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। তাদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে করোনার বিশেষ গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।