আমরা তো পরের চাকরি করি, হুকুমের গোলাম
ভাই এনজিও কিস্তি আদায় করছে। ‘পদক্ষেপ’ বাড়িতে টাকা নিতে আসে। আমাদের তো কাজকর্ম নাই। কি করে কিস্তি দেব? আপনি যদি এ ব্যাপারে একটু লেখেন খুব ভালো হয়। কথাগুলো নিজের ফেসবুকের টাইমলাইনে লিখেছেন পটুয়াখালীর মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের দিনমজুর জসিম খান।
জসিম খানের মতো অনেকেই এনজিওকর্মীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অনুরোধ করে লেখা পাঠাচ্ছেন। এ বিষয়ে একাধিক এনজিওকর্মী বলছেন, আমরা তো পরের চাকরি করি, হুকুমের গোলাম।
করোনাকালীন এ সময়ে উপকূলের জেলেপাড়ায় চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এনজিও আদায় করছে কিস্তির টাকা। মোবাইল ফোনে চাপ সৃষ্টি করাসহ কর্মচারী পাঠিয়ে টাকা আদায় করছে তারা। ‘পদক্ষেপ’ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কোথাও চাপ সৃষ্টি করছেন না। কেউ স্বেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিলে তা নিচ্ছেন।
উপজেলার মিশ্রিপাড়া গ্রামের হনুফা বেগম জানান, তিনি একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিস্তি দিতে চাননি বলে তার সাথে ভালো ব্যবহার করেননি এনজিওর মাঠকর্মী।
মহিপুর থানার আলীপুরের ফাতেমা বেগম জানান, তিনি উদ্দীপনসহ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। গত সপ্তাহে বাসায় এসে মাঠকর্মী বলে গেছেন আগামী সপ্তাহ থেকে টাকা দিতে হবে।
আলীপুরের সাইদুল ইসলাম বলেন, সরকার জুন মাস পর্যন্ত এনজিও ঋণ পরিশোধ করা লাগবে না বলে ঘোষণা দিলেও এনজিও তা মানছে না কেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় এনজি যেখানে কিস্তির টাকা আদায় করছে সেখানে আমাদের মতো ছোট সংস্থা বসে থাকতে পারে না।
উপকূলীয় এলাকায় কাজ করা একাধিক এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকার জুন পর্যন্ত কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ কারণে তারা কাউকে চাপ প্রয়োগ করেন না। যেহেতু তাদের অফিস খোলা সেই কারণে কিস্তির টাকা গ্রহণ করছেন।
কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, কোডেক, কারিতাস, ব্যুরো বাংলাদেশ, উদ্দীপন, পদক্ষেপ, সংগ্রাম’র মতো বড় বড় এনজিওর পাশাপাশি অর্ধশত এনজিওর কার্যক্রম চলমান।
এসব এনজিও'র প্রতি জনপ্রতিনিধি, সচেতনমহল ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে চলমান করোনাকালীন সময়ে এ অঞ্চলের এনজিওগুলো কোনো সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত হয়নি। প্রান্তিক জনপদের গরিব-দুঃখী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এনজিওগুলোর তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি বলে জানান উপকূলের অনেকেই।
অবশ্য বেসরকারি এনজিও সংস্থা অ্যাসিয়েশন অব ভলান্টারি অ্যাকশন সোসাইটি'র (আভাস) উদ্যোগে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককে নগত ৩ হাজার টাকাসহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধক উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করেছে।
এনজিওগুলো শুধু উপকূলীয় জনপদের জেলেপাড়াসহ অতিদরিদ্র পরিবারগুলোকে জিম্মি করে ব্যবসা করছে।
এ ব্যাপারে কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ.এম.মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রান্তিক জনপদে সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে এনজিওগুলো ব্যবসা করবে অথচ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করবে না, আবার দুর্যোগকালীন সময়ে কিস্তির টাকা আদায় করবে তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
করোনার প্রাদুর্ভাবে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য। তার ওপর এনজিওর কিস্তি পরিশোধের তাগাদায় দিশেহারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ঋণ পরিশোধে গ্রহীতাদের বাধ্য না করতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না তারা।
সূত্র জানায়, উপকূলীয় অঞ্চলে অর্ধশত এনজিও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এনজিওকর্মীরা প্রতিদিন ঋণ গ্রহীতাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কিস্তি পরিশোধে তাগাদা দিচ্ছে। কিস্তি আদায়ে মানসিক চাপের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। এক এনজিওকর্মী জানান, অফিসের নির্দেশনা মেনে তাদের কাজ করতে হয়।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত কিস্তির টাকা আদায় কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। কোনো এনজিও কারও কাছ থেকে জোর করে কিস্তির টাকা আদায়ের সুযোগ নেই। কেউ অভিযোগ করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
এমএএস/এমএস