তথ্য বাতায়নে সিলেটের আপডেট নেই, বিড়ম্বনায় জনসাধারণ
জাতীয় তথ্য বাতায়নের সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দফতর-অধিদফতরের তথ্য আপডেট হচ্ছে না প্রায় এক বছর ধরে। ফলে ডিজিটাল সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটের জনসাধারণ। এছাড়া আটটি মেনুর এই তথ্য বাতায়নের সিলেট বিভাগ অংশে ১৮৬টি প্রধান লিংকসহ প্রায় আড়াইশ লিংক রয়েছে, যার অধিকাংশই ওয়েবসাইট ডেভলপ করার পর থেকে আপডেট হয়নি।
গুরুত্বপূর্ণ এই ওয়েবসাইট নিয়মিত আপডেট না হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন সরকারি কর্মকর্তারাও। আবার অনেক সরকারি কর্মকর্তা জানেন না তাদের দফতরের তথ্য, জাতীয় তথ্য বাতায়নে দেয়া আছে বা স্থানীয়ভাবে কারা এটি নিয়ন্ত্রণ করেন।
জাতীয় তথ্য বাতায়নের সিলেট বিভাগ অংশে লিংক http://www.sylhet.gov.bd- এ তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম আছে, কিন্তু বাস্তবে তিনি সেখানে নেই। এমনও দেখা গেছে, ওই কর্মকর্তা বছর দেড়েক আগেই অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেছেন।
আবার কোনো কোনো দফতরের ঠিকানা দেয়া আছে এক জায়গার, প্রতিষ্ঠানটি আছে অন্য জায়গায়। যোগাযোগের জন্য ফোন দেয়া আছে কিন্তু তা অকেজো, মোবাইল নম্বর দেয়া আছে একজনের, কল রিসিভ করছেন অন্যজন। এমন তথ্য বিভ্রাটের মধ্যে পরে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জনসাধারণ।
সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য জানতে ওয়েবসাইটটিতে লগইন করে দেখা গেলো, জেলা নির্বাচন কমকর্তা হিসেবে নাম আছে মো. রাশেদুল ইসলামের অথচ কর্মস্থলে আছেন আজিজুল ইসলাম। যোগাযোগের জন্য রয়েছে একটি টিঅ্যান্ডটি ফোন ও একটি মোবাইল নম্বর। মোবাইলটিতে কল করে যাকে পাওয়া গেলো তিনি সাবেক জেলা নির্বাচন অফিসার রাশেদুল ইসলাম। যিনি প্রায় দুই বছর আগেই সিলেট থেকে বদলি হয়ে কুমিল্লা চলে গেছেন।
এবিষয়ে রাশেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমি দুই বছর হয়ে গেলো সিলেট ছেড়ে এসেছি অথচ এখনো প্রচুর কল আসে আমার মোবাইলে, কল রিসিভ করতে করতে আমি ক্লান্ত। তথ্য বাতায়ন আপটুডেট না হলে আমার মতো অনেক সরকারি কর্মকর্তা এই বিড়ম্বনার শিকার হতে থাকবেন।
জাতীয় তথ্য বাতায়নে সিলেট বিভাগে জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য আপডেট নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বর্তমান জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এতোদিন ডিসি অফিসের তত্ত্বাবধানে ছিলো, দুই-চার মাস হলো আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ভোটার হালনাগাদের দিকে ব্যস্ত থাকায় এই দিকটায় মন দিতে পারিনি। তিনি খুব শিগগিরই জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য আপডেট করবেন বলে আশ্বাস দেন।
তথ্য বাতায়নে সিলেট বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিআরটিসি ট্যাবের `যোগাযোগ` অপশনে লেখা রয়েছে, ম্যানেজার (অপা.), বাস ডিপো ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিআরটিসি, আলমপুর, সিলেট। মোবাইল নম্বর-০১৭১১৪৩৫২১৩। ওই মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে ঢাকা বিআরটিসির ম্যানেজার (অপারেশন) নূরে আলম কলটি রিসিভ করেন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে তিনি সিলেট অফিস থেকে বদলি হয়ে ঢাকা অফিসে যোগদান করেছেন। তার সহযোগিতায় বর্তমান ম্যানেজার মোশাররফ হোসেনের সেলফোন নম্বরটি পাওয়া গেলো। সিলেট বিআরটিসির ম্যানেজার (অপারেশন) মোশাররফ হোসেন জানেনই না, যে জাতীয় তথ্য বাতায়নে বিআরটিসি তথ্য দেয়া আছে। তাই সঠিক না ভুল তিনি বলতে পারছেন না। এতথ্য আপডেট করার দায়িত্ব ডিসি অফিসের না, অন্য কারো সেই বিষয়েও তার জানা নেই।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এই তথ্য বাতায়নে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের মূল ভবনের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। নেই সিলেটের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ এমসি (মুরারি চাঁদ) কলেজেরও কোনো তথ্য। সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয় অপশনে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দুইবার লেখা থাকলেও নেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বা কোনো তথ্য।
এছাড়া তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তাদের তালিকায় ৩১টি লিংক থাকলেও তথ্যের ঘাটতি আছে অধিকাংশে। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য জানতে গেলে দেখা যায়, যোগাযোগের স্থলে ‘মাজার রোড, সিলেট’ লেখা আছে। নাই কোনো দায়িত্বশীলের নাম অথবা ফোন নম্বর। অথচ সিলেটে ‘মাজার রোড’ নামে কোনো রোডের নাম নেই।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের যোগাযোগ অংশে লেখা আছে, ‘কুমিল্লা’ যে ফোন নম্বরটি দেয়া আছে তাও ভুল। এভাবেই জাতীয় তথ্য বাতায়ন সিলেট অংশে অসংখ্য তথ্যগত ভুল ও আপডেটবিহীন রয়েছে।
তথ্য বাতায়নে সিলেট শিক্ষা বোর্ডের কোনো তথ্য না থাকা প্রসঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম গোলাম কিবরিয়া তাপাদার বলেন, এটা আমরা পরিচালনা করি না, ডিসি অফিস করে। এ বিষয়ে তারাই বলতে পারবেন।
পুলিশ সুপার নুরে আলম পুলিশ সুপার কার্যালয়ের যোগাযোগ অংশে ‘কুমিল্লা’ লেখা এবং তথ্য আপডেট না থাকার কারণ হিসেবে বললেন, আমরা আপডেট করি না ডিসি অফিস থেকে করা হয়। তবে তিনি খুব শিগগিরই এই তথ্য আপডেট করার দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিষয়টি অবগত করবেন বলে জানান।
কয়েকদিন আগেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাইটে দেয়া ছিলো তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নাম মো. আবুল কালাম আজাদ যিনি এলপিআর-এ গেছেন অনেক আগেই। সহকারী প্রকৌশলীর নাম দেয়া ছিলো দীপক রঞ্জন দাস তিনিও প্রমোশন নিয়ে সিলেট ত্যাগ করেছেন অনেকদিন হলো। বর্তমানে এই তথ্য বাতায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো তথ্য নেই।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় তথ্য বাতায়ন সিলেট অংশকে সব সময় আপডেট রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে যেসব সমস্যা আছে সেগুলো ঠিক হয়েছে যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় তথ্য বাতায়নে সিলেট অংশে ভুল ও আপডেট না থাকা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি বড় অন্তরায়। তিনি বলেন, শুধু ওয়েবসাইট তৈরি করলেই চলবে না, সময় সময় তা আপডেট না রাখলে জনসাধারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ জুন ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে চালু হওয়া জাতীয় তথ্য বাতায়ন পোর্টালটি (http://www.sylhet.gov.bd)। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জয় বলেছিলেন, বিশ্বের আর কোথাও এত বড় ওয়েব পোর্টাল নেই। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। ২৫ হাজার সরকারি ওয়েবসাইটকে এক জায়গায় এনে ডিজিটাল সেবার ক্ষেত্রে দেশে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।
তথ্য বাতায়নে তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য তৎকালীন ৫০ হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এটির পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি।
ছামির মাহমুদ/বিএ