‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত মৌলভীবাজারের ৬ হাজার গরু
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাগাবলা এলাকার কৃষক আব্দুল বাছিত। তার দুটি গরুর একটির শরীরে হঠাৎ দেখতে পান গুটি গুটি উপসর্গ। এতে গরুর লোম পড়ে যাচ্ছে। কিছু খেতেও চাচ্ছিল না গবাদি পশুগুলো। গ্রামের পশু ডাক্তারের মাধ্যমে বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পরও কোনো ফল হয়নি। পরে গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে পচন ধরে। এমন অবস্থায় এক মাস পর চিকিৎসার জন্য জেলা পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এই রোগের নাম ‘লাম্পি স্কিন’।
রোগ শনাক্ত হতেই এক মাস পার হওয়ায় এখন অবলা প্রাণীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখাই দায়। আব্দুল বাছিতের গরুর মতো জেলার প্রায় ৬ হাজার গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত।
মৌলভীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছর থেকে এই রোগে গবাদি পশু আক্রান্ত হচ্ছে, যদিও রোগটিকে এতদিনে চিহ্নিত করা গেছে। লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গরু মারা যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
এক বছর আগে থেকে এই রোগের সংক্রমণ হলেও বিগত প্রায় ৩-৪ মাসে জেলার ৭টি উপজেলায় রোগটি ছড়িয়েছে ব্যাপকভাবে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৬১১০টি গরু। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২০টি, তার মধ্যে কুলাউড়ায় ১০টি, শ্রীমঙ্গলে ৭টি এবং জুড়ীতে ৩টি।
জেলায় আক্রান্ত ৬ হাজার ১১০টি গরুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বড়লেখা উপজেলায় ২১২৬টি। আক্রান্ত এ সব গরুর এমন রোগ সম্পর্কে পূর্বের ধারণা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
পশু চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসজনিত রোগটি খুব সহজে একটি গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে। মশা, মাছির মাধ্যমে রোগটি ছড়াচ্ছে বেশি।
মৌলভীবাজার সদরের পশু হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. সালাউদ্দিন জানান, আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবারে রুচি কমে যায়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়। গুটি, খোঁড়া, ফুলা হয় এবং লোম উঠে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা না করালে শরীরের নানা স্থানে পানি জমে পচে যেতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করাতে এত গবাদি পশুর মৃত্যু হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার জানান, এই রোগের নাম লাম্পি স্কিন। জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ৬ হাজার ১১০টি গরু। তবে অনেকগুলো ভালো হয়ে গেছে। দেশজুড়ে এ রোগ রয়েছে। তবে মৌলভীবাজারে এ রোগ এখনও কম। কয়েকটি মারা গেছে সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানোর কারণে।
তিনি বলেন, এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন এখনও বের হয়নি। তবে সাধারণ চিকিৎসাতেই এ রোগ সেরে যায় যদি সময়মতো চিকিৎসা করা যায়। তাই চিকিৎসা নিতে হবে সময়মতো। চিকিৎসা নিতে দেরি করলে ভালো হতে যেমন সময় লাগবে তেমনি পশু মারাও যেতে পারে। বিভিন্ন এলাকার মানুষকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
রিপন দে/এফএ/পিআর