তালিকায়ই সীমাবদ্ধ আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা

আকরামুল ইসলাম
আকরামুল ইসলাম আকরামুল ইসলাম সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, ০৯ জুন ২০২০

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বিধ্বস্ত সাতক্ষীরায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা বা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা থমকে রয়েছে। শুধু তালিকায়ই সীমাবন্ধ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তার ধাপ। মৎস্য, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা প্রস্তুত করলেও কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসন বা সহায়তা করা হবে তেমন কোনো নির্দেশনা এখনো এসব দফতরে আসেনি।

অন্যদিকে উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজে জোর দিয়েছে সরকার। প্রথমদিকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গ্রামবাসী বাঁধ সংস্কার করলেও পরবর্তীতে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধ সংস্কারকাজ চলমান। তবে বাঁধ সংস্কার শেষ হতে দুই মাসেরও অধিক সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার আওতায় ৭০টি পয়েন্টে ৩৪ কিলোমটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৩টি পয়েন্টে সম্পূর্ণরূপে ধসে গেছে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এছাড়া সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি ও শ্যামনগরের কিছু অংশে ১০৫টি পয়েন্টে ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় বাঁধ মেরামতের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঠিকাদার নিয়োগ করে আমরা কাজ শুরু করেছি। এখনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। উপকূলীয় দাতিনাখালি, দূর্গাবাটি, গাবুরা, জাপালি, পার্শেমারি এলাকায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজ চলমান। প্রথমে মাটির কাজ করা হচ্ছে। এরপর জিও ব্যাগ ও জিও টেক্সটাইল দিয়ে সিল করে দেয়া হবে। এতে বাঁধ টেকসই হবে। এছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে লেবুগুনিয়া ও ঘোলা এলাকায় দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান জানান, আশাশুনি উপজেলার হাজরাখালী, হিজলা, কোলা, কামালকাটি, চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, দয়ারখাট এলাকায় বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান। এর মধ্যে হাজরাখালী, কোলা, চাকলা, কুড়িকাউনিয়া এলাকায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। সেনাবাহিনীকে অগ্রীম দুই কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কাজের ওপর ভিত্তি করে বরাদ্দ দেয়া হবে। উপকূলে ৩১ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ও ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। বাঁধ সংস্কার করতে দুই মাসেরও বেশি সময় লেগে যাবে। এখনো চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, হাজরাখালি ভাঙন দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। বাঁধ সংস্কারকাজও চলমান।

উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আতাউল হক দোলন জানান, বর্তমান পর্যন্ত ৩০০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ৩০০ বান সরকারি টিন দেয়া হয়েছে। নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫০০ মেট্রিক টন জিআর’র চাল বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংশ্লিষ্ট দফতর করে পাঠিয়েছে। তবে এখনও কোনো নির্দেশ না আসেনি। এছাড়া উপজেলা থেকে ৪৫০০ বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির তালিকা পাঠানো হয়েছে। এখনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ সংস্কারের দিকে জোর দিয়েছে সরকার।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ির উপপরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় কৃষিখাতে ক্ষতি হয়েছে ১৩৮ কোটি টাকা। জনপ্রশাসন সচিবের পরামর্শে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে রাখা হয়েছে। পুনর্বাসন কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি রাখা হয়েছে; তবে সহযোগিতার বিষয়ে এখনো সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত তালিকায়ই সীমাবদ্ধ রয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

jagonews24

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় ৮৬টি মুরগির খামার ও ৯১টি গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, জেলায় ১৩ হাজার ৪৭৭ হেক্টর জমির চিংড়ি, সাদা মাছ, চিংড়ির রেণু ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৭৬ কোটি ৬ লাখ টাকার। এসব ক্ষতিগ্রস্ত ঘের ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, মৎস্য খাতে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা পাবেন। শতকরা ৪ ভাগ সুদে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীরা এ প্রণোদনা নিতে পারবেন। তবে সমস্যা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা নিতে গেলে জমির কাগজপত্র দিতে হচ্ছে, যা বেশিরভাগ চাষিই দিতে পারছেন না। কারণ অধিকাংশ চাষিই জমির মালিকদের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে মাছের ঘের করেন। সবার কাগজ একত্রিত করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় ২২ হাজার ৫১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬০ হাজার ৯১৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, আম্ফানে উপকূলীয় মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বর্তমান পর্যন্ত ৫০০ বান্ডেল ঢেউটিন দিয়েছে। এছাড়া আরও এক হাজার বান্ডেল দ্রুত পাওয়া যাবে। তাছাড়া বাঁধ সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কীভাবে পুনর্বাসন করা যায় সংশ্লিষ্ট দফতরের মাধ্যমে সেটি নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।