গোপালগঞ্জের পূজায় ছিল না উৎসবের আমেজ


প্রকাশিত: ০৮:০৫ এএম, ২২ অক্টোবর ২০১৫

গোপালগঞ্জে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন হলেও ছিল না উৎসবের আমেজ। জেলা শহরের সিকদারপাড়া ও  সাহাপাড়ায় মণ্ডপে হয়েছে নিরব পূজা। এখানে দায়সারা গোছের সাদামাটাভাবে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এক সময় শহরের পুরাতন বাজার রোডের সিকদারপাড়া ও সাহাপাড়ায় জাকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতো। গোটা জেলায় এ দু’ মহল্লার দুর্গাপূজা ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জমজমাট। মন্দির দু’টির আলোকসজ্জা, তোরণ ও প্রতিমা সবার নজর কাড়তো। এ দুই পূজামণ্ডপে উপচেপড়া ভিড় থাকতো। পূজারিরা এ দু’ মহল্লার পূজা দেখতে দলে দলে ভিড় জমাত। এবারে এসব পূজামণ্ডপ ছিল নিষ্প্রাণ। ভক্তদের আনাগোনা ছিল না বললেই চলে। আলোকসজ্জা ও আরতির কোনো উত্তাপ ছিল না।  

বিগত ২০১৩ সালে ১৩ অক্টোবর দুর্গোৎসবের নবমীর দিন সাহাপাড়ায় অষ্ট্রিয়া প্রবাসী শেখ মাসুদুর রহমান খুন হন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক কালাচাঁদ সাহার পরিবারের ৪ সদস্যসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর হিন্দুদের দোকান পাট আতঙ্কে বন্ধ রাখা হয়। দোকান খোলার জন্য প্রত্যেক দোকানদারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়। হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে অনেকেই ভিটে মাটি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে দেশ ত্যাগ করেন।

এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে হয়রানি করে মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের নিরব চাঁদাবাজি করা হয়। বাজার কালিবাড়ি দখলে নেয়া হয়। আসামি বিমল সাহা ও গোপাল সিকদারের বাড়ি দখলে নিতে সেখান থেকে ভাড়ার টাকা আদায় করা হয়। বিমল সাহার বিধবা স্ত্রী শোভা রানী সাহাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। তারপর থেকে এই দুই পাড়ায় হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে।

গত ২ বছর ধরে এখানে অনাড়াম্বরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ দু’ পাড়ার পাশাপাশি জেলা শহরের পূজাগুলো অনেকাংশে ঝিমিয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে সারা জেলার অধিকাংশ পূজামণ্ডপে। অনেকে ওই সব অত্যাচার ও নির্যাতনে কথা চিন্তা করে পূজার আনন্দ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পূজারি জানান, আলোচিত মাসুদুর রহমান রাবেট হত্যাকেণ্ডের ঘটনায় আমাদের সবদিক দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। বিপদে আমাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়ায়নি। পূজায় আনন্দ করব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আনন্দ না করে অনাড়াম্বর ও দায়সারাভাবেই পূজা কাটিয়ে দিচ্ছি।

গোপালগঞ্জে পূজা দেখতে আসা ফরিদপুরের মোহন লাল বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে পুরাতন বাজার ও সাহাপাড়ার পূজা ছিল সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও উৎসব মুখর। এ বছর ওই দু’ পাড়ার পূজা দেখে মনে খুব কষ্ট লেগেছে। সেখানে নেই আলোকসজ্জা ও জৌলুস। এমনটা আমি প্রত্যাশা করিনি। গোপালগঞ্জে পূজা এখন আর দেখার মতো নেই।

সিকদার পাড়া পুজামণ্ডপের সাবেক উপদেষ্টা কালাচাঁদ সাহা বলেন, আমরা রাবেট হত্যার সুষ্টু বিচার চাই। কিন্তু নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হোক এটা আমরা চাই না। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আলীমুল হক কোনো তদন্ত না করেই বাদীর পরামর্শে আদালতে ঘটনার ২ মাসের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করেছে। আমাদের পদে পদে নির্যাতন ও হয়রানি  করে নিরব চাঁদাবাজি করে নিঃস্ব করে দেয়া হয়েছে। এই পূজামণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর কাউন্সিলর শহর আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার সাহা দীপু এখন জেলে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আলীমুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তখন এছাড়া আমাদের কিছুই করার ছিল না।  

এসএম হুমায়ূন কবীর/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।