নমুনা সংগ্রহ বুথে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিদিনই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে বেশি। প্রতিদিনই জেলা সদর হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহ বুথে ভিড় করছেন রোগীরা। রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে নমুনা সংগ্রহকারীদের।
তবে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে। রোগীদের অসচেতনতার কারণে হাসপাতালে আগত অন্যরাও নমুনা দিতে আসা রোগীদের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল থেকে জেলা সদর হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সদর হাসপাতালের তৃতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের সামনে স্থাপিত বুথে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঁচ টাকার টিকিট কেটে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার পর একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয় রোগীদের। এরপর তাদেরকে ফোন করে নমুনা সংগ্রহের দিনক্ষণ বলে দেয়া হয়। চারজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন নমুনা সংগ্রহ বুথে।
প্রথম দিকে রোগীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও এখন চাপ বেড়েছে অনেক। নমুনা সংগ্রহের পাঁচদিন পর দেয়া হয় রিপোর্ট। গত ৬ জুন পর্যন্ত সদর হাসপাতালে ৮৭৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
তবে পজিটিভ রোগীদের চেয়ে নেগেটিভ রোগীরাই নমুনা দিতে এসে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন হাসপাতালে। জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে চলে আসছেন নমুনা দিতে। কিন্তু সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই নমুনা সংগ্রহ বুথের সামনে। অনেকটা জটলা পাকিয়ে নমুনা দেয়ার জন্য বুথের সামনে অবস্থান করেন রোগীরা। এর ফলে বুথের সামনে আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে সুস্থরাও সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে আগত অন্যদেরও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নমুনা দিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, করোনার উপসর্গ না থাকলেও অনেকের রিপোর্ট এখন পজিটিভ আসছে। এর ফলে সবার মাঝে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। সেজন্য জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে নমুনা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু নমুনা দিতে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে জেনেও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকে। বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা রোগীরাই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
জেলা সদর হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ মিঠুন কর্মকার বলেন, এখন অনেকেই জ্বর-সর্দি হলে ভয়ে নমুনা দিতে আসেন। কিন্তু নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে নেগেটিভ রোগীরাও পজিটিভ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমরা রোগীদেরকে প্রতিনিয়ত বলছি সামাজিক দূরত্ব মেনে নমুনা দেয়ার জন্য। কেউ শুনছেন আবার কেউ শুনছেন না।
এ ব্যাপারে জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শওকত হোসেন বলেন, আমরা রোগীদের প্রতিনিয়ত সচেতন হতে বলছি। নমুনা দিতে এসে রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপসর্গ না থাকলে অযথা কেউ যেন নমুনা দিতে ভিড় না জমান সেজন্য মাইকিংও করছি। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, আমরা সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছি। সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন সেটিও প্রচার করছি। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষকে সচেতন করছে। নমুনা সংগ্রহ বুথে দায়িত্বরত কর্মীরা নিজেরা নিরাপদ থাকার পাশাপাশি রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নমুনা দেন সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল রোববার (৭ জুন) পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৫১ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন। আর সুস্থ হয়েছেন ৭৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৭২ জন।
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/জেআইএম