আড়াই মাস পর বাংলাদেশ-ভারতের আমদানি-রফতানি শুরু
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি না থাকায় দীর্ঘ আড়াই মাস (৭৬ দিন) সড়কপথে বন্ধ ছিল ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরও নানা জটিলতায় আটকে থাকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য পাঠাল ভারত।
রোববার (০৭ জনু) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ২৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে মোটরসাইকেলের পার্টস এসেছে বেনাপোল বন্দরে। এর আমদানিকারক এইচএমসিএল নিলয়, ঢাকা। রফতানিকারক ভারতের হিরো হোন্ডা কোম্পানি। আগামীকাল সোমবার (০৮ জুন) থেকে অন্যান্য পণ্য ভারত থেকে আমদানি হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, আমদানি-রফতানি চালু হওয়ার খবর শুনে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের হাজার হাজার শ্রমিক কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। দীর্ঘ আড়াই মাসের অধিক সময় আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় তারা মানবেতন জীবনযাপন করছিলেন। একই সঙ্গে আমদানিকারকরাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন আমদানি-রফতানি চালুর খবর শুনে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় গত ২৩ মার্চ থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রফতানি চালুর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার পত্র দিলেও কলকাতায় করোনার রেড জোন থাকায় তৃণমূল সরকার আমদানি-রফতানির অনুমতি দেয়নি। চতুর্থ দফায় লকডাউন চালুর পর কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে লকডাউন তুলে নিয়ে আনলক-অন পদ্ধতি চালু করে।
সেই সুবাদে পশ্চিমবাংলা সরকার এবং পেট্রাপোল বন্দরের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করে একাধিকবার আমদানি-রফতানি চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও পেট্রাপোল ও বনগাঁর স্থানীয় বন্দর ব্যবহারকারীদের নানা জটিলতায় আমদানি-রফতানি চালু করতে পারেনি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সব সমস্যার সমাধান শেষে রোববার বিকেল থেকে আমদানি শুরু হয়। সোমবার থেকে আমদানির পাশাপাশি রফতানি চলবে।
পেট্রাপোলের ব্যবসায়ী গৌতম দাস বলেন, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আবার এই স্থলবন্দর দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হলো। যদিও ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যের অনুমতি দিয়েছে ২৪ এপ্রিল। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে অনুমতি না পাওয়ায় রফতানিকারকরা বাংলাদেশে কোনো পণ্য পাঠাতে পারেনি।
তিনি বলেন, ভারত সরকার বারবার চিঠি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য শুরুর অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। ভারত সরকার ছাড়াও বেশকিছু বণিক সভাও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বাণিজ্যের অনুমতি দিতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু এতদিন কারও কথাই কানে নেয়নি পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ভারতের আরেক ব্যবসায়ী জানান, বাংলাদেশ থেকে আমদানিকারক সংস্থাগুলো আমাদের বারবার বলছিল রফতানি শুরু করতে। অনেক অপেক্ষার পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই বাংলাদেশে পণ্য পাঠাব। কারণ ভারত সরকারের অনুমোদন রয়েছে। আর কাস্টমস এবং বিএসএফ আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু বনগাঁর পৌর মেয়র ও পেট্রাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কতিপয় নেতার একগুঁয়েমির কারণে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। পরে সব কিছুর সমাধান হয়ে রোববার বিকেল থেকে বাংলাদেশে ট্রাক পাঠানো শুরু হলো।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, দীর্ঘ আড়াই মাস পর ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমদানি-রফতানি কার্যক্রম রোববার বিকেল থেকে শুরু করেছে। আগামীকাল সোমবার থেকে এই পথে অন্যান্য মালামাল আসবে। এতে ব্যবসায়ীসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিদুল হক বলেন, আড়াই মাস পর রোববার বিকেলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ২৪টি ট্রাকে মোটরসাইকেলের পার্টসের একটি চালান রফতানি করেছে। সোমবার থেকে এই পথে আমদানি-রফতানি স্বাভাবিকভাবে চলবে।
জামাল হোসেন/এএম/এমএস