লকডাউন উঠলেও সাড়া নেই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের
সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন শনিবার থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলপথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ফের চালু হবে।
সিদ্ধান্তের কথা বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনকে জানায় ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের সব বন্দর ব্যবহারকারী, কাস্টম ও বন্দর প্রস্তুত ছিল আমদানি পণ্যের জন্য। আমদানি-রফতানি চালু হওয়ার খবর শুনে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের হাজারও শ্রমিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলেন। আড়াই মাসের বেশি সময় আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। আমদানিকারকরাও স্বস্তি ফিরে পাচ্ছিলেন। কিন্তু শনিবারও কার্যক্রম শুরু করা গেল না। এর আগে ১ জুন আমদানি-রফতানি চালু করার কথা জানানো হয়েছিল ভারত থেকে।
সে সময় পেট্রাপোল বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছিলেন, তারা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন পণ্য রফতানি করার জন্য। কিন্তু তাদের পৌরসভার চেয়ারম্যান জানান বারাসাত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) কর্তৃক সরাসরি পণ্য রফতানির একটি পত্র না পাওয়া পর্যন্ত তারা পণ্য রফতানি করতে পারবেন না। আমদানি-রফতানি চালু হলে যদি করোনা বেড়ে যায় তাহলে এই দায় দায়িত্ব আমাদের ঘাড়েই বর্তাবে। সুতরাং ডিএম থেকে সরাসরি রফতানি আদেশ না এলে তিনি এই রফতানি বন্ধ রাখার কথা জানান। ফলে নীতিগতভাবে সব সিদ্ধান্ত থাকলেও বাংলাদেশে পণ্য রফতানি করতে পারেননি তারা।
আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বেনাপোল-পেট্রাপোল সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর। প্রতি বছর ৩০ হাজার কোটি টাকার পণ্য এই স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি হয়। সরাসরি প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং পরোক্ষভাবে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার মানুষ নির্ভরশীল এই স্থলবন্দরের ওপর।
আইনি জটিলতা এবং করোনা প্রাদুর্ভাব থাকার পরও পেট্রাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতি সরাসরি পণ্য রফতানির জন্য একটি পত্র ডিএম-এর দপ্তরে দিয়েছেন। সেখানে তারা সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিপালন করেই বাংলাদেশে পণ্য পাঠাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। ওইপত্রে তারা ডিএমকে অনুরোধ জানিয়েছেন, সরাসরি বাংলাদেশে পণ্য রফতানির জন্য।
চিঠির আলোকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ন্যোম্যান্স-ল্যান্ডে বৈঠকে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকুসহ কাস্টমস, পুলিশ, বিএসএফ ও পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস, ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল বন্দর, কাস্টমস, বিজিবি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশন ও ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় শনিবার থেকে এ পথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু করা হবে। তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো পণ্য আমদানি-রফতানি করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
২৩ মার্চ বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়। এরপর তা চালুর জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বারবার পত্র দিলেও কলকাতায় করোনায় রেড জোন থাকায় রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি। ভারতের কেন্দ্র সরকার বেশকিছু ক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করলেও ব্যবসায়ীরা কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এখনও থমকে আছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।
অন্যদিকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের কারণে বেনাপোলের নেতারা রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে আছেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমদানিকারকদের জানানো হয়েছিল শনিবার ভারত থেকে পণ্য আমদানি হবে। আমদানিকারকরাও সে মোতাবেক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন পণ্য খালাসের।
বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেন্দ্র যেখানে বাধা দিচ্ছে না। তাছাড়া রাজ্য সরকারেরও একটি পত্র তাদের হাতে আছে সরাসরি আমদানি-রফতানি চালু করার। সেখানে কী কারণে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে সেটা একটি রহস্যের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে।
ভারতীয় একজন রফতানিকারক বলেন, পেট্রাপোলে প্রায় আড়াই হাজার ট্রাক মালবোঝাই করে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। এই ট্রাকগুলোর অনেক পণ্য ইতোমধ্যে বৃষ্টিতে ভিজেছে। অনেক ট্রাকের ব্যাটারি, টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে। সিদ্ধান্তের দোটানায় আমদানি-রফতানি চালু হচ্ছে না পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দীর্ঘ আড়াই মাস পর ভারত বাংলাদেশের প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের সাথে বিভিন্ন সময় আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেয়। তবে ভারতের ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া না পাওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও প্রস্তুত। তবে ভারতের ব্যবসায়ীদের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় কার্যক্রম থমকে আছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা নাসিদুল হক জানান, বন্দরের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানির ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত ভারত থেকে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। বাংলাদেশ থেকেও কোনো গাড়ি ভারতে যায়নি। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম শুরু হয়নি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি-রফতানি চালু করলেই বন্দর সচল হয়ে যাবে। আমরাও প্রস্তুত রয়েছি।
জামাল হোসেন/এনএফ/এমকেএইচ