খুনির ফেলে যাওয়া ক্যাপ থেকে হত্যার রহস্য উদঘাটন
খুনির ফেলে যাওয়া একটি ক্যাপের সূত্র ধরে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। গত বছরের ৫ মে ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ড উপজেলার দখলপুর গ্রামের বেলেমাঠে কৃষক নুর ইসলাম ওরফে বুড়োকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পাশের জমির পানের বরজে পড়ে থাকা হত্যাকারীদের একজনের ব্যবহৃত ক্যাপের সূত্র ধর ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গ্রেফতাররা হলেন- বরিশখালী গ্রামের মৃত মুছা মোল্লার ছেলে মতিচুর রহমান, একই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে জিনারুল ইসলাম, সাবার মোল্লার ছেলে শামীম হোসেন। এদের মধ্যে মতিচুর জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক রয়েছে। জিনারুল ও শামীম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করায় ডিবি পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ মে বিকেলে হরিণাকুন্ডু উপজেলার দখলপুর গ্রামের বেলেমাঠ থেকে কৃষক নুর ইসলাম ওরফে বুড়োর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিন নিহতের ভাই আজিজুল ইসলাম বাদী হয়ে হরিণাকুন্ডু থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও মূল ঘটনা জানতে তদন্তে নামে থানা পুলিশ। একজনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আদালত মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করেন। এরপর ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশের ওসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত শুরু করের ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম।
ঘটনার বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, হত্যার ২ থেকে ৩ দিন আগে কৃষক নুর ইসলাম ওরফে বুড়ো তার পানের বরজের জমির আইল কাটার সময় পাশের জমির মালিক একই গ্রামের মতিচুর রহমান বাধা দেন। এ নিয়ে বুড়ো ও মতিচুরের মধ্যে বাড়বিতণ্ডা হয়। হত্যার দুই দিন আগে সন্ধ্যায় মতিচুর বরিশখালী বাজারের একটি চায়ের দোকানে আসামিদের নিয়ে বুড়োকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ৫ মে বুড়ো নিজের পানের বরজে কাজ করার সময় হত্যাকারীরা ঘটনাস্থলে যান। কিলিং মিশনে অংশ নেন ছয়জন। প্রথমে বুড়োকে চড়-থাপ্পড় মারলে তিনি পড়ে যান। সেখান থেকে দৌড়ে পাশের পানের বরজে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আসামিরা যার যার মত চলে যান। এদের মধ্যে হত্যাকারীদের একজন জিনারুল ইসলাম পাশের জমিতে তার নিজের পানের বরজে যান। সেখানে তার মাথায় থাকা রক্তমাখা ক্যাপ ভুল করে ফেলে রেখে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ক্যাপটি উদ্ধার করে। মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম ক্যাপের মূল মালিককে খুঁজতে থাকেন।
তিনি জানান, স্থানীয় লোকজন ও গ্রামবাসী ক্যাপটি জিনারুলের বলে শনাক্ত করলে জিনারুলকে গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হয়। তবে হত্যার পর থেকে জিনারুল ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় আত্মগোপনে থাকেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে কখনও নির্মাণ শ্রমিক, কখনও হকার সেজে সেখানে অভিযান শুরু করে ডিবি। পরে ঢাকা থেকে জিনারুলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ।
পরে ঝিনাইদহে আনার পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন জিনারুল। পরে গত ৩১ মে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক শামীম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। শামীমও সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।
পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/আরএআর/পিআর