ভিক্ষা করবো না


প্রকাশিত: ০৪:০৭ এএম, ২১ অক্টোবর ২০১৫

ভিক্ষা করলে মানুষ খারাপ বলবে। নিজেরও খারাপ লাগবে। ভিক্ষা করবো না, কষ্ট করে হলেও কাজ করে খাব। তবুও মানুষের দরজায় দরজায় ভিক্ষার জন্য ঘুরে বেড়াবো না বাবা। কাজ না করলে খাব কি। কে খাইতে দিবে আমারে। একা মানুষ পেটে তো কিছু দিতে হবে। তাই পঁচা দুর্গন্ধের মধ্যে বসেই কুড়াচ্ছি ফেলনা জিনিসপত্র (ভাংড়ি)। কথাগুলো বলছিলেন আসমা বেগম (৬২)। থাকেন নওগাঁ শহরের মাস্টার পাড়ায়। টিনের একটা ঘর ৫শ টাকায় ভাড়া নিয়ে থাকেন।

নওগাঁ শহরের যমুনা নদীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশেই গরু হাটি মল ফেলার স্থান। ময়লা আর্বজনার এতোটাই দুর্গন্ধ যে সেখানকার বাতাসই দূষিত হয়ে গেছে। মানুষ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় মুখে কাপড় দিয়ে নিংশ্বাস বন্ধ করে থাকেন। আর এ ময়লা আর্বজনা দুর্গন্ধের মধ্যে তপ্ত রোদে বসে ভাঙা একটা ছাতা মাথায় দিয়ে কুড়াচ্ছেন ফেলনা জিনিসপত্র (ভাংড়ি)। রোদের মধ্যে ক্লান্ত হয়ে মাঝে মাঝে আরাম করছেন। বোতলে পানি ভরে রেখেছেন। আর মাঝে মাঝে খাচ্ছেন।

ফেলনা জিনিসপত্র, স্যালাইনের তার ও বোতল, সিরিঞ্জের মাথার ক্যাপ, কাঁচের বোতল, কাগজ, নারকেলের ছোবড়া, কোমল পানীয়ের বোতল কুড়িয়ে বস্তায় রাখছেন। এইসব ফেলনা জিনিসপত্র শহরের ভাংড়ির দোকানে বিক্রি করেন। যা টাকা পান তা দিয়ে চাল, ডাল কিনে খান ও ঘর ভাড়া দেন।

আসমা বেগম জানান, রোদের মধ্যে ঘুরে ঘুরে ভাংড়ি কুড়ানোর ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছি বাবা। ৩ মাস থেকে রক্ত আমাশয় হয়েছে। টাকার অভাবে ঠিকমত ওষুধপত্র খেতে পারি না। সরকারি হাসপাতাল থেকে যা একটু ওষুধপত্র পায় তা খেয়েও কাজ হচ্ছে না। একটু সাহায্য করার কেউ নাই। অসুখে বিছিনায় পড়লে তো মরণদশা হয়ে যাবে।

Naogaon-Female

স্বামী আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন স্বামী দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তারপর থেকেই কষ্ট করছি। আগে বগুড়ার সান্তাহারে থাকতাম। স্বামী মারা যাওয়ার পর ৬ বছর থেকে নওগাঁয় থাকি। তারপর থেকেই ভাংড়ি কুড়ানো শুরু করেছি। আর কতদিন এভাবে কাজ করতে পারবো জানি না।

বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি লিব্যাক, সারজেল, ওমিনিক্স, টিটিভ্যাক্স, নিউটেক, সিফার, কোল সেভিং ক্রিম, সিগারেট স্টার ও ডারবি প্যাকেট কাগজগুলো কুড়িয়ে পাশেই রেখেছেন। স্যালাইনের তার ও বোতল, সিরিঞ্জের মাথার ক্যাপ, কাঁচের বোতলগুলো বস্তায় ভরছেন। প্যাকেট কাগজগুলো শহরের ভাংড়ির দোকানে বিক্রি হয় ৫ টাকা কেজি, স্যালাইনের তার ও বোতল ১০ টাকা কেজি, কাঁচের বোতল ১৫ টাকা কেজি এবং নারকেলের ছোবড়া ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। এতে যা টাকা হয় তা দিয়েই কষ্ট করে জীবন চালাতে হচ্ছে বলে জানালেন আসমা বেগম।

আব্বাস আলী/এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।