অন্ধ হয়ে গেছেন চিত্রশিল্পী সুলতানের পালিত কন্যা
দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালার (৮২)। চোখে ছানি পড়ায় এখন তিনি কিছুই দেখতে পান না। অর্থের অভাবে ছানি অপারেশন করাতে পারছেন না তিনি। মাকড়শার জালের মতো নানা যন্ত্রণা এবং কষ্ট তার এখন নিত্য সঙ্গী।
নড়াইল পৌর সভার কুড়িগ্রাম এলাকার চানাচুর বিক্রেতা হরিপদ সাহার সঙ্গে নিহার বালার বিয়ে হয়। ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা ও স্বামীকে নিয়ে তিনি শিল্পী সুলতানের বাড়ির পাশে বসবাস করতেন।
শিল্পীর সঙ্গে হরিপদ সাহার খুব সখ্যতা ছিল। সেই সুবাধে নিহার বালা সুলতানকে কাকু বলে ডাকতেন। শিল্পীও তাকে মেয়ের মতো স্নেহ করতেন। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে দুই মেয়ে নিয়ে নিহার বালা মুষড়ে পড়েন। এ সময় আমাশাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসহায় শিল্পীর সেবায় এগিয়ে আসেন নিহার বালা। তখন থেকে দুই মেয়ে নিয়ে নিহার বালার স্থায়ীভাবে সুলতানের বাড়িতে বসবাস শুরু।
নিহার বালা শিল্পীকে সেবা করেছেন, অনিয়মের ক্ষেত্রে শাসনও করেছেন। বাউন্ডুলে জীবনকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনার চেষ্টা করে ছবি আঁকার ব্যাপারে উৎসাহ যুগিয়েছেন। ছবি আঁকার কাজে সহায়তা থেকে শুরু করে রান্না-বান্না, শিল্পীকে গোসল করানো, সময় মতো খাওয়ানো,পশু-পাখিদের দেখভাল সবই করেছেন নিহার বালা। পরবর্তীতে শিল্পীর আসে বিশ্বজোড়া খ্যাতি।
সাদা শাড়ি, শীর্ণ দেহ, পোকায় খাওয়া দাঁত, বড় বড় চোখ বিধবা নিহার বালাই সুলতানের জীবন যাপনে নিভৃত ছায়ার মতো সেবাময়ী হয়ে কাটিয়েছেন দুই দশক। সুলতানের বিশ্ব বরেণ্য হওয়ার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি। শিল্প সমালোচকদের দৃষ্টিতে সুলতানে শেষ জীবনে আঁকা চিত্রকর্মগুলো বিশ্বমানের। এই সময়গুলোতে সুলতানের অবলম্বন ছিলেন নিহার বালা।
জীবদ্দশায় শিল্পী সুলতান বলেছিলেন, নিহারের সেবা যত্নই মূলত তার বোহেমিয়াম জীবনের অবসান ঘটে। জীবনটা হয় নিয়ন্ত্রিত।
১৯৯৪ সালে শিল্পীর মৃত্যুর পর ২০০৩ সালে নিহার বালার বসবাসের জন্য সরকারিভাবে সুলতান সংগ্রহশালা সংলগ্ন দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিন শেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
৮২ বছরে পা দেওয়া নিহার বালা জানান, শেষ বয়সে সরকার কর্তৃক মাসিক পাঁচ হাজার টাকা অনুদানই তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। দুই বছর হলো চোখে কিছুই দেখতে পান না। চোখে ছানি পড়ে দুই চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। শ্বাসকষ্টের রোগী আমি। ওষুধ পথ্য কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। সামান্য বৃষ্টিতে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে। নিজের জমি-জিরাত বলতে কিছুই নেই। এই বাড়িটিও আমার নয়। কাকুর সঙ্গে আমার যে ছবি ছিল সেগুলোও সংগ্রহশালা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা স্মৃতি সংগ্রহশালা পরিদর্শনে এলে আমাকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক হেলাল মাহামুদ শরীফ বলেন, শিল্পী সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালার জন্য যা কিছু করণীয় তা জেলা প্রশাসন ছাড়াও সরকার করবে।
এমএএস/আরআইপি