করোনা নেগেটিভ এলো ঠিকই, কিন্তু ভাইকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো
রাজধানীর গুলশানের বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া রিয়াজুল আলম লিটনের (৪৫) করোনা নেগেটিভ এসেছে।
তার বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর গ্রামে। বায়িং হাউসে কাজ করতেন লিটন। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় করোনা সন্দেহে বুধবার (২৭ মে) বিকেল ৩টায় ইউনাইটেড হাসপাতালে যান তিনি। করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার পর রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাকে আইসোলেশনে ভর্তি থাকতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আধা ঘণ্টা পর ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি হন লিটন। সেই সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
এরই মধ্যে বুধবার রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে অগ্নিকাণ্ডে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একজন লিটন।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) লিটনের পরীক্ষার ফলাফল করোনা নেগেটিভ এসেছে ঠিকই; কিন্তু হাসপাতাল থেকে লাশ হয়ে তাকে বাড়ি ফিরতে হলো। লিটন বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর গ্রামের মৃত ফরজান আলীর ছেলে। ঢাকাস্থ বীরগঞ্জ সমিতির উপদেষ্টা এবং লায়ন্স অব দিনাজপুর গার্ডেনের সাবেক সেক্রেটারি ছিলেন তিনি।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন রিয়াজুল আলম লিটন। পারিবারিক জীবনে এক সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। তার সাত বছরের এক ছেলে ও স্ত্রী রয়েছেন।
রিয়াজুল আলম লিটনের বড় ভাই রইসুল আজম বলেন, স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার জেমি ও সাত বছরের একমাত্র সন্তান আসমাইন ফিয়াজকে নিয়ে শ্যামলীতে থাকতো আমার ছোট ভাই। বিদেশি একটি বায়িং হাউজের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতো লিটন। বুধবার অফিসে যাওয়ার পর শরীরে তাপমাত্রা একটু বেশি হওয়ায় করোনা পরীক্ষা করতে ইউনাইটেড হাসপাতালে যায়। বিকেল ৩টার দিকে তার শরীর থেকে নমুনা নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি হতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অপেক্ষা করছিল করোনা পরীক্ষার ফলাফলের জন্য। ফলাফল ঠিকই নেগেটিভ এলো। কিন্তু ভাই আমার বাঁচলো না। তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো।
স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিটনকে রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আইসোলেশন থাকার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি বিষয়টি ঢাকাস্থ বীরগঞ্জ সমিতির কর্মকর্তাদের জানান। রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি জীবন রক্ষা করতে পারেননি। পরে তার করোনা ফলাফল নেগেটিভ আসে।
বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিটনের লাশ গ্রামের বাড়ি এসে পৌঁছায়। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বীরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বিকেল ৩টায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, লিটন যেকোনো দুর্যোগে বীরগঞ্জের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে তার দেয়া ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বীরগঞ্জ সমিতির ব্যানারে। প্রতি বছর দরিদ্র ছাত্রদের সহায়তা করতেন তিনি।
পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসা পাঁচ রোগীর এমন মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না।
এমদাদুল হক মিলন/এএম/পিআর