বান্ধবীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ, কিশোরকে পিটিয়ে মারল নয়ন বাহিনী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ২৬ মে ২০২০

বরগুনায় ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া বল্ক ইয়ার্ডে ঘুরতে গেলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় হৃদয় নামের এক কিশোরকে। প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার এ দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ের ব্লক ইয়ার্ডে শত শত তরুণ-তরুণী ঘুরতে যায়। ওইদিন বিকেলে হৃদয়ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু নিয়ে গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে যায়। এ সময় হৃদয়ের এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হলে তার সঙ্গে কথা বলে হৃদয়। তখন হৃদয় এবং তার বান্ধবীকে নিয়ে স্থানীয় নয়ন ও তার সহযোগীরা বাজে মন্তব্য করায় এর প্রতিবাদ করে হৃদয়।

এর কিছুক্ষণ পরই উত্যক্তকারী নয়ন, হেলাল, আবীর, তণীক এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হৃদয় দৌড়ে বাঁচতে চাইলেও তাকে ধাওয়া করে ধরে পেটাতে থাকে নয়ন, হেলাল এবং নোমানসহ তাদের সহযোগীরা। একপর্যায়ে লাঠির প্রচণ্ড আঘাতে ঢলে পড়ে হৃদয়।

এ সময় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বরগুনা সদর হাসপাতালে আনা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে আজ সকালে হৃদয়ের মৃত্যু হয়।

হৃদয় এ বছর টেক্সটাইল ভোকেশনাল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টপ্রত্যাশী ছিল। সে তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বাবা দরিদ্র দেলোয়ার হোসেন রিকশাচালক। তারা বরগুনার চরকলোনী এলাকার চাঁদশী সড়কের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে শহর থেকে তরুণ-তরুণীরা ঘুরতে গেলে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিক কাজিসহ তার ভাই কনু কাজির ছেলে নোমান, স্থানীয় আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল, লিটন হাওলাদারের ছেলে নয়নসহ আবীর এবং তনিক ও তাদের সহযোগীরা বিভিন্ন সময় অনেক অপরিচত ছেলে-মেয়েদের অপমান করত। এরই ধারাবাহিকতায় হৃদয় হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

হৃদয়ের বন্ধু মিঠুন রায় জানায়, হৃদয়সহ তারা সাত বন্ধু ঈদের দিন বিকেলে পায়রা নদীর পাড়ে গোলবুনিয়া ব্লক ইয়ার্ডে ঘুরতে যায়। এসময় হৃদয়ের সঙ্গে তার এক বান্ধবীর দেখা হয়। তারা কথা বলার সময় নয়ন, হেলাল এবং নোমানরা তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার কিছুক্ষণ পরেই তারা ১০-১৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল লাঠিসোটা নিয়ে হৃদয়ের ওপর হামলা করে। এ সময় হৃদয়ের বন্ধুরা বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হৃদয়কে ফেলে পালিয়ে যায় তারা।

হৃদয়ের অপর এক বন্ধু ফেরদৌস মোল্লা জানান, হামলাকারীদের সবাইকে আমরা চিনি না। তবে অনেক বয়স্ক লোকজনকেও এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিতে দেখা গেছে।

মুঠোফোনে হৃদয়ের মা ফিরোজা বেগম জানান, হৃদয় তাদের একমাত্র ছেলে। তার বাবার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় হৃদয়ের হত্যাকারীদের মধ্যে আলতাফ মৃধার ছেলে হেলাল মৃধাদের সঙ্গে তাদের আগে থেকেই বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরেই হেলালের নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্তের পর হৃদয়ের মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসা হবে। হৃদয়ের বাবা-মা এখনও বরগুনায় ফিরে না আসায় এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।

বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।