প্রেমের বিয়েতে জীবন দিতে হলো সবুজকে
দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের প্রেম, অতপর বিয়ে। কিন্তু বিয়ের প্রায় ১১ মাসের মধ্যেই দাম্পত্য কলহের বিরোধ মীমাংসার নামে সালিশ ডেকে সেখানেই জীবন দিতে হয়েছে প্রেমিক সবুজকে। কুমিল্লার আদালতের সাবেক পিপি অ্যাড. মজিবুর রহমানের আদালতপাড়ার বাসায় সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
স্ত্রীর পক্ষের লোকেরা জামাতা সবুজকে নির্যাতন ও গোসলখানায় নিয়ে মারধর করে জোরপূর্বক বিষ ঢেলে হত্যা করেছে বলে সবুজের পরিবার দাবি করলেও স্ত্রীর পক্ষের লোকজনের দাবি, সবুজ নিজের স্বেচ্ছায় রাগে-ক্ষোভে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে।
স্থানীয় সূত্র ও সালিশ বৈঠকে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা জানান, জেলার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউপির মাদবপুর গ্রামের আবদুল বাতেনের ছেলে মো. সবুজ (২৬) প্রায় ১১ মাস আগে প্রেম করে তার নিকটাত্বীয় জেলার দেবিদ্বার উপজেলার বড় আলমপুর গ্রামের শাহজাহানের মেয়ে ফাহিমা আক্তার মিমকে (২০) বিয়ে করেন।
বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই তাদের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। ইতিমধ্যে স্ত্রী মিম চারমাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়লে স্বামী সবুজকে না জানিয়ে সে ক্লিনিকে গিয়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবুজ তার স্ত্রী মিমকে মারধর করে আহত করলে মিমকে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
এ নিয়ে স্ত্রী মিম নারী নির্যাতনের মামলা করার প্রস্তুতি নিলে উভয় পক্ষের স্বজনরা কুমিল্লা বারের সাবেক পিপি অ্যাড. মজিবুর রহমানের শরানাপন্ন হয়। পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার বিকেলে কুমিল্লায় উভয় পক্ষের লোকেরা অ্যাড. মুজিবুর রহমানের বাসায় শালিসি বৈঠকে বসে।
এ বিষয়ে সবুজের চাচা সুলতান আহম্মদ জানান, মাগরিবের আজান হলে বৈঠকের অনেকেই নামাজে চলে যায়। এসময় সবুজের স্ত্রীর মামা আরমানসহ তার সহযোগীরা সবুজকে মারধর করে গোসলখানায় জোরপূর্বক বিষ খাইয়ে দেয়। এতে তার আর্তচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর রাতে তার মৃত্যু হয়।
শালিস বৈঠকে অংশ নেয়া বুড়িচংয়ের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবদুল করিম জানান, মেয়ে পক্ষের লোকজনের কারণেই সবুজের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে রাত ১০টার দিকে নিহতের মরদেহ প্রথমে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় এবং পরে ময়নাতদন্তের জন্য কুমেক হাসপাতালে নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে সালিস বৈঠকের প্রধান অ্যাড. মজিবুর রহমান জানান, পারিবারিক বিরোধ মীমাংসা করে দেয়ার জন্য আমি উভয় পক্ষকে ডেকেছিলাম, কিন্তু বিষয়টি মীমাংসা করা সম্ভব হয়নি, উভয় পক্ষই ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ে। তবে কীভাবে সবুজের মৃত্যু হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি।
রাত ১১টায় কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রব জানান, দাম্পত্য কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরিছি, বর্তমানে মরদেহ মর্গে আছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো থানায় মামলা হয়নি।
কামাল উদ্দিন/বিএ