করোনায় নরসিংদীতে মানবিক পুলিশ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে শুরু থেকেই মাঠে কাজ করছে নরসিংদী জেলা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ লকডাউন নিশ্চিতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও সামাজিক দূরুত্ব নিশ্চিতে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। পাশাপাশি তারা করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়দের কাছে মানবিক খাদ্য সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।
কখনও মাথায় গামছা বেঁধে কাটছেন অসহায় কৃষকের জমির পাকা ধান। হট লাইনে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত অভুক্ত মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। এতিম, প্রতিবন্ধী, ভাসমান ও ছিন্নমূল অনাহারি মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন ইফতার। স্ব্যাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ ফ্রি মেডিকেল টিম চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
শুধু তাই নয়, করোনার ছোবল থেকে পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করতে পুলিশ লাইন্স ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জীবানুনাশক টানেল বসানো হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া একাধিক ব্যক্তির মরদেহ দাফনে এলাকাবাসী ভয় পেলেও এগিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
করোনার এই দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষকে সর্বাধিক সেবা দিয়ে আলোচনায় এসেছে জেলা পুলিশ। সাধারণ মানুষের মুখে মুখে এখন জেলা পুলিশের প্রশংসা। সর্বশেষ লকডাউন নিশ্চিতে জেলা পুলিশের কর্মকাণ্ড ও কৃষকের ধান কেটে দিয়ে আলোচনার সম্মুখভাগে চলে আসেন এই বাহিনীর সদস্যরা।
জেলা পুলিশ তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংকট মোকাবেলায় শুরু থেকেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী প্রদান, অসহায় দুস্থ ও পরিবহন শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণসহ নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রমজান মাসের শুরুতেই নরসিংদী জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় ‘সূলভ মূল্যে ঘরের বাজার’ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, তেল, ছোলা, বেসন, লবণ, চিনি, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, ইত্যাদি সুলভ মূল্যে মানুষের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
যাতে বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমানো সম্ভব হয় এবং মানুষকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো যায়। তাছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে খুচরা বাজারের চেয়ে কম মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সবজি ক্রয় করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা সবজির ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন।
নরসিংদী সদরসহ, মাধবদী, পলাশ, শিবপুর মডেল, মনোহরদী, রায়পুরা ও বেলাব থানাধীন বিভিন্ন স্থানে গণজমায়েত রোধ, অযথা ঘোরাঘুরি বন্ধে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে জেলা পুলিশ। এছাড়াও আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে না দেন সে লক্ষ্যে বাজারগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয়। মত বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সতর্কও করা হয়েছে।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও মিডিয়া সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক রুপম কুমার সরকার বলেন, নরসিংদী জেলা পুলিশের সুপার হিরো হলো আমাদের এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার স্যার। স্যারের সুদক্ষ নির্দেশনায় ৬টি উপজেলার ৭টি থানার সকল পুলিশ সদস্যরা করোনা সংকট মোকাবেলায় ও লকডাউন নিশ্চিতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। অসহায়দের খ্যাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক বিতরণসহ সকল ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখা। এই দুটি কাজের পাশাপাশি এখন আমরা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি জানান, লকডাউন নিশ্চিত ও মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ জেলা থেকে মানুষের প্রবেশ ও প্রস্থান রোধে সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭২টি চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। এ পযর্ন্ত ১০ হাজারেরও বেশি পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। মানুষের স্ব্যাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম করা হয়েছে। একই সঙ্গে টেলি সেবা চালু করা হয়েছে। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃতদের দাফন-কাফন করছেন পুলিশ সদস্যরা। বাজার নিয়ন্ত্রণসহ গুজব রোধে সব ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।
সঞ্জিত সাহা/আরএআর/জেআইএম