ছাত্রীদের মেসেঞ্জারে প্রেম নিবেদন করেন প্রধান শিক্ষক!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ১০:১২ পিএম, ১৮ মে ২০২০
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী

যশোরের মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে প্রেম নিবেদনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (১৮ মে) প্রধান শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফীর কাছে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

এ নিয়ে উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সর্বমহলে প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। তার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও। তারা মেয়েকে স্কুলে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন।

যশোরের মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী এভাবে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একাধিক শিক্ষার্থীর ইনবক্সে আপত্তিকর মেসেজ দিয়ে আসছেন। ।

এদিকে রোববার (১৭) রাত থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর আপত্তিকর কথাবার্তার কয়েকটি স্ক্রিনশট চিত্র ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায় এক ছাত্রীর মেসেঞ্জারে তিনি লিখেছেন ‘জান আই লাভ ইউ। আমাকে কষ্ট দিও না। আই মিস ইউ। তুমি কি সত্যি আমাকে একটুও ভালবাসো সোনা? এতদিন আল্লাহকে ডাকলেও তিনি সাড়া দিতেন। কিন্তু তুমি সাড়া দিলে না।’

অভিযোগ উঠেছে, মেসেঞ্জারে এমন কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রেম নিবেদন করে আসছেন ওই শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক নিজের ফেসবুক আইডি থেকে প্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত কয়েকজন ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এছাড়া তিনি মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ভাষাও ব্যবহার করেন। স্কুল থেকে বিদায় নেয়া শিক্ষার্থীরাও তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক হায়দার আলীর দাবি করেন, কয়েকদিন ধরে তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাকে ফাঁসানোর জন্য একটি চক্র আইডি হ্যাক করে এসব কাজ করেছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইডি হ্যাকড হলে জিডি করতে হয়, তা আমি জানি না।

অভিযোগকারী দুই ছাত্রী ছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন ছাত্রী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা হয়রানির অভিযোগ করেছে।

এক ছাত্রী জানায়, গত আগস্টে তাকে মেসেঞ্জারে আপত্তিকর কথাবার্তা লিখলে সে প্রধান শিক্ষকের আইডি ব্লক করে দেয়।

অপর এক ছাত্রী বলে, স্যারের এমন কুরুচিপূর্ণ লেখার প্রতিবাদ করলেই হুমকি দিতেন।

আরেক ছাত্রী জানান, সে বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউএনওকে জানানোর কথা বললেই প্রধান শিক্ষক কিছুদিন চুপ হয়ে যেতেন। কিছুদিন পর আরেকজনকে এমন আপত্তিকর বার্তা দেয়া শুরু করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, হেড স্যারের ফেসবুক আইডিতে নাকি মাসখানেক ধরে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই তিনি রোববার (১৭ মে) পুরোনো আইডি ব্লক করে নতুন আইডি খুলেছেন। আমাদের সেই আইডিতে রিকুয়েস্ট পাঠাতে বলেছেন।

এর আগেও চলতি বছরের শুরুতে লিতুন জিরা নামে এক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন এই প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী।

মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, এ বিষয়ে ছাত্রীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

মিলন রহমান/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।