২০ ঘণ্টা হেঁটে ত্রাণ পেয়েও স্বস্তিতে নাড়াইছড়ির ৫০০ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি খাগড়াছড়ি
প্রকাশিত: ০৫:১৪ এএম, ১৮ মে ২০২০

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি জনপদ নাড়াইছড়ি। দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরের পিছিয়ে পড়া জনপদ এটি। দেশের সীমান্তবর্তী দুর্গম নাড়াইছড়ির ১৪টি গ্রামে ৫৬০ পরিবারের বাস।

দীঘিনালার বাবুছড়া ইউনিয়ননের নাড়াইছড়ি ওর্য়াডের সাথে সড়ক যোগাযোগ নেই। দুর্গম এ জনপদের সবাই জুমচাষী। জুমচাষ তাদের আয়ের একমাত্র পথ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে বাজারে আসা বন্ধ। জুম রোপণের সময়ে প্রতিবছরই তাদের খাদ্য সঙ্কটে পড়তে হয়। খাদ্য সঙ্কটের ওপর করোনার প্রাদুর্ভাব যেন মড়ার উপর যেন খাড়ার ঘাঁ। দুর্গম জনপদের মানুষের এ যখন অবস্থা তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন।

ধনপাতা থেকে পায়ে হেঁটে নাড়াইছড়ির উত্তর মাথায় যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। আর দক্ষিণ মাথা থেকে নাড়াইছড়ি যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শনিবার (১৬ মে) ধনপাতা এলাকা থেকে সহায়তা নিতে দুই শতাধিক মানুষ জড়ো হয়। আসা যাওয়ায় প্রায় ২০ ঘণ্টার পথ পায়ে হেঁটে ত্রাণ পেয়েও স্বস্তির হাসি ফুটেছে নাড়াইছড়ির ৫০০ পরিবারের মানুষের মুখে।

jagonews24

দূরত্ব ও দুর্গম এলাকা বিবেচনায় নাড়াইছড়ির ৫০০ পরিবারের জন্য ১৫ টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দেয় দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া দেয়া হয় তেল-আলুসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য। পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চাল পেয়ে কিছুদিন হলেও স্বস্তিতে থাকবে দুর্গম এলাকার এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির মানুষ।

দীঘিনালা উপজেলা প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সুবিধাভোগী সাধারণ মানুষ। সুভাষ চাকমা নামে একজন বলেন, এমন দুর্যোগকালীন উপজেলা প্রশাসনের ত্রাণ সহায়তা নাড়াইছড়িবাসী আজীবন মনে রাখবে। অতীতে কোনো উপজেলা নির্বাহী অফিসার দুর্গম এলাকার মানুষের কষ্ট অনুধাবন করেননি। করোনাকালে এই সহায়তা পেয়ে ১৪ গ্রামের ৫০০ মানুষের খাদ্য সঙ্কট দূর হয়েছে।

নাড়াইছড়ি ওয়ার্ডর ইউপি সদস্য প্রীতিরঞ্জন চাকমা জানান, ধনপাতা থেকে নাড়াইছড়ির ‘দক্ষিণ মাথা’ হেঁটে যেতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা। উত্তর মাথার বাসিন্দাদের ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টা। আসা যাওয়ায় প্রায় ২০ ঘণ্টা সময় লাগে। উচু নিচু পাহাড়ি পথ মাড়িয়ে এখানে পৌঁছাতে হয়। বিশেষ বরাদ্দের আওতায় পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল পাওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। এছাড়া এসব ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছালে শিলছড়ি, কোপিয়াতলি, বুজধন কার্বারি, রেজিমন কার্বারি পাড়াসহ নাড়াইছড়ির ১৪ গ্রামের মানুষ চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়তো। করোনার মতো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগে দীর্ঘ পথ হেঁটে ত্রাণ পেয়েও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে নাড়াইছড়ির ৫০০ পরিবার।

jagonews24

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, নাড়াইছড়ি দীঘিনালার সবচেয়ে প্রত্যন্ত জনপদ। এখানে অন্তত ৫ শতাধিক পরিবারের বসবাস। দুর্গম এলাকার নগনের নিকটবর্তী বাজারে আসতে সময় লাগে ৪ থেকে ১০ ঘণ্টা। এসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো বেশ চ্যালেঞ্জিং। সে বিবেচনায় নাড়াইছড়ির জন্য বিশেষ বরাদ্দের আওতায় পরিবার প্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। আমরা ৫০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। তারা নৌকা এবং বাঁশের ভেলায় করে ত্রাণ নিয়ে গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিধি এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের সহায়তায় নাড়াইছড়ির প্রতিটি পবিবারকে আমরা বিশেষ বরাদ্দ পৌঁছে দিতে পেরেছি।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।