রাজন হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক ২৫ অক্টোবর


প্রকাশিত: ০৩:৩০ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

সিলেটে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিট পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদারের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়।

আগামী ২০ অক্টোবর আসামিপক্ষের মতামত গ্রহণ ও ২৫ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। ফলে অক্টোবরেই আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ হবে। এরপর রায়ের অপেক্ষায় থাকার পালা।

রোববার মামলার কার্যক্রম চলাকালে প্রথমবারের মতো আদালতে হাজির করা হয় সৌদি আরবে পালিয়ে থাকা কামরুল ইসলামকে। সকালে মামলার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর কামরুলের আইনজীবী হিসেবে অ্যাড. আলী হায়দার ফারুক ও অ্যাড. ইউসুফ খান নিযুক্ত হন। পরে তারা কামরুলের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করা সাক্ষীর সাক্ষ্য পুনরায় গ্রহণের আবেদন জানান।

আবেদনে কামরুলের আইনজীবী উল্লেখ করেন, সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণকালে অভিযুক্ত কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন না এবং তার আইনজীবীও ছিলেন না। তাই কামরুলের উপস্থিতিতে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে বিকেলে মহানগর দায়রা জজ আকবর হোসেন মৃধা কামরুলের করা এ আবেদন খারিজ করে দেন।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি মফুর আলী জানান, আদালত মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ করেছেন। আগামী ২০ অক্টোবর রাজন্য হত্যা মামলার সাক্ষী ও আসামি যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হবে এবং ২৫ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

রাজনের বাবার নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাড. মসরুর আহমদ শওকত জাগো নিউজকে জানান, দুপুর ১২টার দিকে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যায়। এর আগে বেলা ৩টায় আধা ঘণ্টার বিরতি দেন আদালত।

তিনি আরো বলেন, আগামী ২৫ অক্টোবর যুক্তিতর্ক শুরু হবে। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর রায়ের অপেক্ষায় থাকবো আমরা। পরে আদালত সুবিধা মতো তারিখে মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শওকত বলেন, বাদীপক্ষের সাক্ষীর মাধ্যমে আমরা আদালতে তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেছি আসামিরা সবাই এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।

রোববার সাক্ষগ্রহণ উপলক্ষ্যে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে কামরুলসহ কারাবন্দি থাকা ১১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। কামরুলকে হাজির করার সময় উপস্থিত কয়েক শত জনতা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ফাঁসি ফাঁসি বলে স্লোগান দেন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ মানুষেরা জুতা প্রর্দশন করে শিশু হত্যার জন্য তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন।

আদালতের কার্যক্রমের শুরুতে কামরুলকে মামলার অভিযোগপত্র পড়ে শোনান পিপি অ্যাড. মফুর আলী। এরপর কামরুলের আইনজীবী পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন জানান।

সাক্ষগ্রহণকালে আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন, শহরতলির কুমারগাঁও শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামলার প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম, তার ভাই মুহিদ আলম, আলী হায়দার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, ময়না চৌকিদার ওরফে বড় ময়না, রুহুল আমিন, দুলাল আহমদ, জালালাবাদ থানার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিও চিত্র ধারণকারী নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল­াহ ও আয়াজ আলী।

গত ১ অক্টোবর শুরু হয় রাজন হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম। এরপর গত ৪, ৭,৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৩৫ জন সাক্ষ্য দেন। রোববার সুরঞ্জিতের সাক্ষ্যসহ মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলো। আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে সৌদিতে আটককৃত কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ এবং আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়। আদালত ২৪ আগস্ট সোমবার চার্জশিট আমলে নেন।

পরদিন ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ। গত ৩১ আগস্ট রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পলাতক কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মহানগর হাকিম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়।

এর আগে গত ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল ২টা ৫৭মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ৪০ উড়োজাহাজে করে পুলিশের তিন কর্মকর্তা কামরুলকে নিয়ে সৌদি আরব থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরেন। কাস্টমস ও ইমেগ্রেশনের প্রক্রিয়া শেষ করে ওই দিন রাত সাড়ে ৯টায় কড়া পুলিশি পাহারায় তাকে নিয়ে সিলেট আনা হয়। পরদিন শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটিতে বেঁধে ১৩ বছরের শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর সৌদি আরবে পালিয়ে যান কামরুল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে থাকেন। রাজনকে নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

তখন প্রবাসীদের সহায়তায় কামরুলকে আটক করে সৌদি পুলিশের হাতে তুলে দেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। এরপর কামরুলকে ফেরাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ জারি করা হয় রেড নোটিস। ওই দিন শিশু রাজনকে পেটানোয় কামরুলই বেশি সক্রিয় ছিল বলে ওই ঘটনার ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়।

কামরুলকে নিয়ে এই মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ মামলায় পলাতক রয়েছে আরো দুই আসামি। আসামিরা হলেন, কামরুলের ভাই সদর উপজেলার শেখপাড়ার বাসিন্দা শামীম আহমদ ও সুনামগঞ্জের পাভেল আহমদ।

ছামির মাহমুদ/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।