চুরির অভিযোগে পিটিয়ে ভাঙা হলো গৃহকর্মীর দাঁত
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের ১০ বছরের শিশু লিয়া ঢাকায় গিয়েছিল গৃহকর্মীর কাজ করতে। তাকে সেখানে গুড়া দুধ চুরি করে খাওয়ার অপবাদ দিয়ে সারা শরীরে গরম খন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভেঙে দেয়া হয়েছে তার চারটি দাঁত।
এমন অমানবিক নির্যাতন শেষে লিয়াকে তার বাবা-মার কাছে ফেরৎ দেয়া হয়েছে। অবশেষে শিশুটির ঠাঁই হয়েছে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
নির্যাতিতা মেয়েটির শরীরে এখানো নির্যাতনের চিহ্ন স্পষ্ট। মুখ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের সৃষ্ট ঘাগুলো এখনো শুকায়নি। মুখের ভেতরের দাঁত ভেঙে দেয়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শিশুটি তার উপর নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছে তাতে যেকোনো বিবেকবান ব্যক্তিরই গা শিউরে উঠবে। মানুষ মানুষের উপর এমন নির্দয় হতে পারে তা এই শিশু গৃহকর্মীকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড়ফা গ্রামের রহমান মীনার মেয়ে লিয়াকে (১০) ছয় মাস আগে একই গ্রামের শাহাবুদ্দিন মীনা (ডাক্তার) ও তার স্ত্রী ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় কাজের জন্য নিয়ে যান।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার লিয়া জানায়, সেখানে কিছুদিন ভালোই কাটে তার। তারপর তাকে বাসার সব কাজ করতে দেয়া হয়। যে কারণে মেয়েটি এত কাজের চাপ সহ্য করতে হিমশিম খাচ্ছিল। কাজের একটু এদিক-সেদিক হলেই গৃহকর্তী তিন্নি বেগম তার উপর নির্যাতন চালাতেন। ঘটনার অকস্মিকতায় সেদিন বিপত্ত বাঁধে যেদিন ঘরের গুড়ােদুধ গৃহকর্তার বড় মেয়ে খেয়ে দোষ চাপায় শিশুটির উপর। তখনই এ অপবাদে শিশু লিয়াকে ব্যাপক মারধর করেন গৃকের্তী তিন্নি বেগম। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেয়া হয় গরম খন্তির ছ্যাঁকা।
রুটি বানানোর ব্যালন দিয়ে মুখের উপর আঘাত করে ভেঙে দেয়া হয় তার চারটি দাঁত। তাকে কাঁদতে শুনে পাশের বাসার এক নারী পুলিশে খবর দিলে বাসায় গিয়ে শিশুটিকে ঢাকার খিলগাঁও থানা পুলিশ উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে শিশুটির বাবা-মাকে ম্যানেজ করে গৃহকর্তা নজরুল ইসলাম শিশুটিকে গত বুধবার গভীর রাতে শ্বশুর বাড়িতে ফেরৎ দিয়ে যান। শ্বশুর বাড়ির লোকজন পরে তার বাবা-মায়ের কাছে শিশুটিকে দিয়ে আসেন। শরীরের অবস্থা খারাপ দেখে অবশেষে শুক্রবার বিকেলে তার বাবা-মা শিশুটিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেখানেই চলছে শিশুটির চিকিৎসা।
নির্যাতনের শিকার লিয়ার মা মর্জিনা বেগম ও খালা কুলসুম বেগম তাদের মেয়ের উপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে গোপিনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইদ্রিস আলী ও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিষয়টি যেহেতু ঢাকায় হয়েছে সেজন্য তাদেরকে সঠিক বিচার পেতে হলে সেখানেই অভিযোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে তেমনই পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এস এম হুমায়ূন কবীর/এমজেড/পিআর