করোনা আক্রান্ত মাকে দেখতে দরজায় উঁকি দেয় ১৮ মাসের সন্তান
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) থমকে আছে বিশ্ব। থমকে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে দিন দিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। শঙ্কার পাশাপাশি আক্রান্ত মানুষের সুস্থ হওয়ার গল্পও আশা জাগিয়েছে। করোনার ক্রান্তিলগ্নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চিকিৎসকরা। এমনই দুজন সম্মুখযোদ্ধা ডা. রেজাউর রহমান ও ডা. মাফরুহা মাহবুব দম্পতি।
ডা. রেজাউর রহমান পটুয়াখালী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডা. মাফরুহা মাহবুব ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থাসিয়া বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত।
এই চিকিৎসক দম্পতির সাড়ে ছয় বছর বয়সী রাদিয়া রেজা ও ১৮ মাস বয়সী রাফসান রেজা নামের দুটি সন্তান রয়েছে। ১৮ মাসের দুধের বাচ্চা বাসায় রেখে যিনি আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিয়েছেন, তিনি আজ করোনায় আক্রান্ত। গত ১৮ এপ্রিল মাফরুহা মাহবুবের করোনা পজিটিভ আসে। সেই সাথে তাকে ঢাকায় তার নিজ বাসায় আইসোলেশনে রাখা হয়।
ডা. মাফরুহা মাহবুব বলেন, করোনা পজিটিভ আসার পর থেকে বাসায় আলাদা রুম, আলাদা খাবার, আলাদা সবকিছু ব্যবহার করছি। সবচেয়ে বড় ত্যাগ ১৮ মাসের বাচ্চাকে কাছে পেয়েও কোলে নিতে পারি না, আদর করা হয় না। বাচ্চাটা সারাক্ষণ শুধু মা, মা বলে। প্রথম প্রথম ভিডিওকল রিসিভ করত, কথা বলত এখন ভিডিওকলও সে ধরে না। দরজার নিচ থেকে মাকে এক পলক দেখার জন্য উঁকি দেয়। মায়ের কাছে আসতে কান্না করে। গৃহপরিচারিকার কাছে বাবুরা আছে। ওই ওদের দেখা শোনা করছে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় মানুষের সেবা দিতে প্রস্তুত। আমার স্বামী এখানে থাকে না। তাই ছোট বাচ্চাদের রেখে কীভাবে দায়িত্ব পালন করব সেটা নিয়ে সমস্যা ছিল। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও আমার বাবা-মা আমাকে পূর্ণ সাহস দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। গৃহপরিচারিকা বাচ্চাদের খেয়াল নিচ্ছে। স্বামী প্রতিনিয়ত খোঁজ নিচ্ছে। ঊর্ধ্বতনরা খোঁজ নিচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে। এখন আর ভয় করে না।
ডা. রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমার স্ত্রী চিকিৎসক। সে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। গত ১৮ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ আসে। বর্তমানে ঢাকার বাসায় আইসোলেশনে আছে। আমাদের দুটি সন্তান আছে।’
তিনি বলেন, আমার এই সময় স্ত্রী-সন্তানদের পাশে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে দেশের এই ক্রান্তিকালে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। আর আমার এখান থেকে (ঢাকার বাসায়) গিয়ে লাভ কী? কর্মস্থল ত্যাগ করা নিষেধ। তাই কর্মস্থলে আছি, রোগী দেখছি। এই মহামারি লড়াই করার জন্য এটাই আমার প্রেরণা দিচ্ছে।
রেজাউর রহমানের মা মোমেনা রহমান বলেন, ছেলে ও পুত্রবধূ দুজনই চিকিৎসক। আজ পুত্রবধূ করোনায় আক্রান্ত। আমাদের ছোট নাতিরা বাবা-মাকে কাছে পাচ্ছে না। আমরা তাদের কাছে পাচ্ছি না। দেশের এই ক্রান্তিকালে ছেলে ও পুত্রবধূ দায়িত্ব পালন করবে এটা স্বাভাবিক। তাদের জন্য আমাদের গর্ব হয়।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/বিএ/জেআইএম