সমস্যা বাম কানে, চিকিৎসা হলো ডান কানের
বাম কানে সমস্যার চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিয়াবিল গ্রামের লিমা আক্তার (২৩)। কিন্তু ডাক্তার চিকিৎসা করলেন ডান কানে। তাও আবার ভুল চিকিৎসা।
লিমার ডান কানে এখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা। আর কিছুই শুনতে পারছেন না তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জ শহরের হাই কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। চিকিৎসকের নাম শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন লিমা আক্তার।
মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে লিমা আক্তার জানান, বাম কানে পোকা জাতীয় কিছু ঢুকে পড়ায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা নিয়ে গত শুক্রবার তিনি হাই কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে ডা. মো. শহিদুল ইসলাম নামের একজন তার কান পরীক্ষা করেন। ডা. শহিদুল তাকে জানান, বাম কানে সমস্যা নেই। তবে ডান কানের ভেতরে ঘা থেকে পুঁজ জমেছে। পুঁজ বের না করলে চিরদিনের জন্য লিমা কানে শুনতে পারবেন না। ডান কানে কোনো সমস্যা নেই, ব্যাথাও নেই বলার পরও লিমাকে তাড়াহুড়ো করে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। পুঁজ পরিস্কারের কথা বলে লিমার ডান কানে সাকার মেশিন স্থাপন করা হয়।
লিমা জানান, সাকার মেশিনের বাতাসের টানে তীব্র যন্ত্রণায় তিনি চিৎকার করে উঠেন। তার বাধা সত্যেও তিন দফায় সাকার মেশিন দিয়ে ডান কান পরিস্কার করা হয়। সাকার মেশিন দিয়ে পরিস্কার করার পর লিমা তার ডান কানে কিছু শুনতে না পারার কথা বললে পাঁচ ধরণের ওষুধ প্রেসক্রিপশন করে ডা. শহিদুল বলেন, এগুলো খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় শনিবার বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিমা আক্তার অভিযোগ করেন। রোববার মানিকগঞ্জে লিমা নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ইউসূফ হায়দারের কাছে কান পরীক্ষা করিয়েছেন। লিমা জানান, চিকিৎসক তাকে বলেছেন, ডান কানের পর্দা ফেটে গেছে। কানের ভেতরে রক্ত জমাট হয়ে আছে।
লিমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন ডা. শহিদুল ইসলাম আসলে একজন ভুয়া ডাক্তার। একসময় ঢাকার সিএমএইচ এ চাকরি করতেন। সেখান থেকে অবসর নেয়ার পর মানিকগঞ্জে এসে আরও কয়েকজনকে নিয়ে হাই কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুলে বসেন।
এ ব্যাপারে ডা. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে একজন ডিপ্লোমাধারী ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেন। তবে কোথা থেকে ডিপ্লোমা নিয়েছেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। একসময় সিএমএইচ এ চাকিরি করতেন বলে জানান।
লিমাকে সাকার মেশিন দিয়ে চিকিৎসা করার কথা স্বীকার করে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ওর বাম কানে কোনো সমস্যা ছিল না। ডান কানে ইনফেকশন ছিল। নাক,কান,গলার বিশেষজ্ঞ না হয়ে একজন ডিপ্লোমাধারী চিকিৎসক এই ধরনের রোগীর চিকিৎসা করতে পারে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অবশ্যই পারে। তারা এ ভাবেই চিকিৎসা করে আসছেন বলেও দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, হাই কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তিনি চিকিৎসকের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মানিকগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আবদুল মালেক জাগো নিউজকে জানান, ডিপ্লোমাধারী কোনো চিকিৎসক এই ধরনের রোগীর এভাবে চিকিৎসা করতে পারেন না। এ ধরনের রোগীকে চিকিৎসা দিতে হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দরকার হবে।
মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদ আহম্মেদ লিমার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
বি.এম খোরশেদ/এমজেড/আরআইপি