এবারও ব্যয়বহুল পূজা চৌমুহনীতে


প্রকাশিত: ০৪:২১ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

তপু, রাতুল, তন্ময়, হৃদয়, বিপ্লব, তীর্থ, রাহুল এদের সবার বয়স ৫ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। এসেছে মণ্ডপ দেখতে। তাদের মতো আরো অনেকেই এসেছেন মণ্ডপগুলোর শেষ প্রস্তুতি দেখতে। নোয়াখালীর ঐতিহ্যবাহীর বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে এমনই চিত্র।

বিজয়া মণ্ডপ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন সাহা জাগো নিউজকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও তারা ভক্ত-দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে মন্দিরের ডিজাইনে তাদের পূজামণ্ডপ তৈরি করেছেন। গত বছর আইসল্যান্ড আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছিলো। এবার তাদের বাজেট ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা।

Durga

এর কিছুটা দূরে খোদ বাড়ির প্রাঙ্গনে চলছে বিশাল জায়গা জুড়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ । ১০/১২ জন কারিগর ব্যস্ত দ্রুত সময়ে মণ্ডপ তৈরির কাজ ঘুছিয়ে আনার জন্য। কেউ শেষ মুহূর্তে রংয়ের স্প্রে করছেন। কেউ ছোট ছোট প্রতিমা বসাচ্ছেন। আবার পাশেই দেখা গেলো সাউন্ড সিস্টেমের একদল কর্মী ব্যস্ত নির্বিঘ্নভাবে দর্শকদের আনন্দ দেয়া যায় সে আয়োজনে। এখানে কথা হয় মঙ্গলা পূজা কমিটির অন্যতম সদস্য পাপন সাহার সঙ্গে।

তিনি জানান, তাদের মণ্ডপের মূল থিম হলো অপশক্তির পতন। এখানে ৪০ ফুটের মহাদেবের প্রতিমা বসানো হয়েছে। যা এর আগে সারা দেশে কেউ বসাতে পারেনি। এর বিশেষ আকর্ষণ হলো মহাদেবের মাথা থেকে ঝর্ণার পানি পড়বে। আর নিচ থেকে দেবী দুর্গা বের হয়ে উপরে উঠবে। তাদের এ মণ্ডপ তৈরি করতে ২০ লাখের উপরে বাজেট রাখা হয়েছে। তিনি সকলকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে এ মণ্ডপ দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

Durga

মঙ্গলার পাশেই তৈরি করা হচ্ছে আরো একটি মণ্ডপ। ত্রিশুল পূজা মণ্ডপ তৈরির প্রধান ডিজাইনার চট্রগ্রামের রাউজান থেকে আগত কাজল পাল জানান, এখন ডিজিটাল যুগ। অনেকের ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে মণ্ডপ তৈরি করলেও তিনি ধর্মের মূল বিষয়কে মাথায় রেখে হিন্দু ধর্মালম্বীদের ভারতের তীর্থ স্থানের আদলে এখানে ৫১ সতিপিটের মন্দির তৈরি করেছেন। অনেকের পক্ষে এক সঙ্গে ভারতে গিয়ে যা দর্শন করা অসম্ভব ছিল তারা এখানে এসে ৫১ সতিপিট দর্শন করতে পারবে। প্রায় ৪ মাস ধরে ১৬ থেকে ১৭ জন কারিগর এ মণ্ডপ তৈরির কাজ করছেন। শুধু মণ্ডপ তৈরির বাজেট রাখা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

প্রতি বছরের মতো এবার চৌমুহনী গনিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৈরি করা হয়েছে দশভুজা মণ্ডপ। ভারতের দিল্লির একটি মন্দিরের অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে এ মণ্ডপটি। শেষ মুহূর্তে মণ্ডপের কাজ চুড়ান্ত করতে ব্যস্ত কারিগররা। কথা হয় দশভুজা মণ্ডপের প্রধান ডিজাইনার টুটুল পুরোহিতের সঙ্গে।

Durga

তিনি জাগো নিউজকে জানান, গত তিন বছর ধরে এ মাঠে মণ্ডপ তৈরির কাজ করছেন। নানা থিমে এর আগে মণ্ডপ তৈরি করেছেন এবং দর্শনার্থীরা দেখেও খুব খুশি হয়েছেন। এবারও হাজার হাজার দর্শনার্থীর কথা মাথায় রেখে দিল্লির একটি মন্দিরের আদলে এখানে মণ্ডপ তৈরি করছেন। এর মূল থিম হলো সব সময় শান্তি ও সুস্থভাবে যেন সবাই থাকতে পারে এবং মায়ের আরাধনা করতে পারে। ৪৫ দিন ধরে ১০ জন লোক মিলে এ মণ্ডপ তৈরির করেছেন। যার বাজেট ছিল ৩০ লাখ টাকা।

চৌমুহনী শ্রী শ্রী রাম ঠাকুর আশ্রমে গিয়ে দেখা যায় প্রতিমা কারিগর অমল পাল দুর্গা প্রতিমার সাজ সজ্জায় ব্যস্ত। প্রতিমার গায়ে শেষ তুলির আঁচড় দিচ্ছেন। পরানো হচ্ছে শাড়িসহ নানা ধরনের গয়না। প্রতি বছরের মতো এবার শরিয়তপুর থেকে তিনি এসেছেন এখানে। তার সঙ্গে আরো ৫/৬ জন কারিগর দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাগুলো সাজিয়ে তোলার কাজে।

Durga

কথা হয় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি বাবু বিনয় কিশোর রায়ের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি জানান, এবার জেলায় মোট ১৫৭ টি মণ্ডপে পূজা আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে বেগমগঞ্জে ২০টি, সোনাইমুড়িতে ১০টি, চাটখিলে ৯টি, সেনবাগে ১২টি, কোম্পানীগঞ্জে ১২টি, কবিরহাটে ১৬টি, সুবর্ণচরে ২৫টি, হাতিয়ায় ৩১টি এবং সদরে ১৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরো জানান, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া  যায়নি। ইতোমধ্যে প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে একাধিকবার সভা হয়েছে।

Durga

তবে জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীতে বরাবরের মতোই এবারও দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পূজার আয়োজন করা হয়েছে। একটি মণ্ডপে সর্বোচ্ছ ৩০ লাখ এবং সর্বনিম্ন ১০ লাখ টাকা খরচ করবে। এখানকার শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউর মন্দির, দশভুজা, ত্রিনয়নী, অপরূপা, বিজয়া, মহায়মায়া, ত্রিশূল ও নবদুর্গা, মঙ্গলা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। দেশ সেরা পূজার আয়োজন চৌমুহনীতে হওয়ার কারণে দেশের দূর দূরান্ত থেকে এবারও অনেকেই পূজা দেখার জন্য এখানে আসবে। তবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

এদিকে এবারের দুর্গাপূজায় প্রশাসনের প্রস্ততির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ সাংবাদিকদের জানান, পূজামণ্ডপগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৪৭টি, গুরুত্বপূর্ণ ৪২টি এবং ৬৪টি সাধারণ পূজামণ্ডপ। এগুলোতে সাদা পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি পোশাকি পুলিশ, ট্রাফিক, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একটি আইন-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা হয়েছে নির্বিঘ্নভাবে যেন সবাই পূজা করতে পারে।  

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।