আ. লীগের সম্মেলন ঘিরে সরগরম টাঙ্গাইল
দীর্ঘ ১১ বছর পর আগামীকাল রোববার টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে শহর। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে শোভা পাচ্ছে তোরণ। মোড়ে মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরোটা শহর।
এদিকে, টাঙ্গাইল আউটার স্টেডিয়ামকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্মেলনস্থল ছাড়াও আশপাশের এলাকা ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া সম্মেলনে আসা নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানাতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে শহরের বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় এবং অনেকটা ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের নতুন করে উজ্জীবিত করতে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। এ সম্মেলনে ৭০ লাখ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ ২০০৪ সালের ৫ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনে অ্যাড. শামসুল রহমান খান শাহজাহানকে সভাপতি ও ফজলুল রহমান খান ফারুককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সভাপতিসহ ১৩ জন সদস্য ইতিমধ্যে মারা গেছেন।
অপরদিকে, তিন বছরের নির্বাচিত কমিটি পাড়ি দিয়েছে দীর্ঘ ১১ বছর। দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকটাই হতাশা দেখা দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন কোনো নেতৃত্ব আসছিল না। আর তাই এবারের সম্মেলনকে ঘিরে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে দলীয় নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলীয় একাধিক নেতা জানান, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খান ফারুক নতুন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সভাপতি নির্বাচিত হবেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য এবং বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে রয়েছেন। তিনি দলের কাণ্ডারি হয়ে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। এ পদে বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি বর্ষীয়ান নেতা অ্যাড. আব্দুর রাজ্জাক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তিনিসহ তার সমর্থকরা জানান।
তবে এবার সম্মেলনের মূল আলোচনা ও পর্যালোচনা চলছে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। ক্ষমতাধর এই পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। প্রার্থীরা তাদের ঘোষণা দিয়ে এরই মধ্যে পোস্টার-ব্যানার লাগিয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব কে সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন- তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন মহলে বিচার বিশ্লেষণ।
শুধু আওয়ামী লীগ কর্মীরাই নয়, সাধারণ জনগণের মুখেও একটাই প্রশ্ন, কে হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সভাপতি, আর কেইবা হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক।
সম্মেলনে ৪৩৯ জন কাউন্সিলর তাদের মতামত প্রদান করে আগামী তিন বছরের জন্য নেতা নির্বাচিত করবেন। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহমদ, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. আলমগীর খান মেনু, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়ে তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ ও কাউন্সিলরদের কাছে সমর্থন পেতে ব্যাপক গণসংযোগ করে চলেছেন। পাশাপাশি প্রার্থীরা কেন্দ্রেও জোর লবিং করে যাচ্ছেন।
রোববার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। আর প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
সম্মেলনের প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এছাড়া সম্মেলনে সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও সাহারা খাতুন, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. মমতাজ উদ্দিন মেহেদীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
এআরএ/বিএ