গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিলো মা, দেখে জড়িয়ে ধরলো মেয়ে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মানিকগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৬:২২ পিএম, ০৪ মে ২০২০

অপমানের জ্বালা সইতে না পেরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে এক গৃহবধূর আত্মহত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় মাকে জড়িয়ে ধরায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছে ৬ বছরের শিশু কন্যা।

রোববার মধ্যরাতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর আঠালিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সোমবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুতুল আক্তার (২৫) নামে ওই গৃহবধূ মারা যান। তার একমাত্র শিশু কন্যা আনহা (৬) বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন। আগুনে তার শরীরের ৬০ ভাগ পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে।

পুতুল আক্তার ঢাকার কল্যাণপুর নতুন বাজার বস্তির বাসিন্দা মেহাম্মদ আলীর মেয়ে। ওই বস্তির সুমন মিয়ার সাথে ৫ বছর আগে বিয়ে হয় তার। মাস খানেক ধরে তারা সিংগাইরের আঠালিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

পুতুলের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, বিয়ের পর থেকে তার মেয়ে স্বামীর সাথে কল্যাণপুর বস্তিতেই থাকতো। কিন্তু মাস খানেক আগে বস্তির আরেক বাসিন্দা বখাটে মিন্টু মিয়া (৪০) তার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে ফুসলিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। দুইদিন পর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে আনা হয়। পরে সামাজিকভাবে বিষয়টি মিমাংসা করা হলে স্বামীর সাথে আবারও সংসার শুরু করে পুতুল। কিন্তু বখাটে মিন্টু মিয়া তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে।

এ কারণে এক মাস আগে পুতুলকে নিয়ে তার স্বামী সুমন মিয়া মানিকগঞ্জের সিংগাইরে বাসাভাড়া নেন।

পুতুলের স্বামী সুমন মিয়া জানান, রোববার রাতে প্রতিদিনের মতো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ স্ত্রীর চিৎকারে তার ঘুম ভাঙে। দেখেন স্ত্রীর শরীরে আগুন জ্বলছে। এসময় শিশু কন্যার ঘুম ভেঙে গেলে সে মাকে জড়িয়ে ধরতে যায়। এতে তার শরীরেও আগুন লাগে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় পানি ঢেলে আগুন নেভানো হয়। ততক্ষণে মা-মেয়ে দু’জনেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এরপর ওয়াসিম নামে এক প্রতিবেশি জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন। রাতেই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পুতুল।

সুমন মিয়া আরও জানান, বখাটে মিন্টু তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন করে নানাভাবে উত্যক্ত করতো এবং ভয়ভীতি দেখাতো। বলতো, তুই যদি ফিরে না আসোস তাহলে তোর ঘরে আগুন দেব। স্বামীকে খুন করবো। এছাড়া বস্তিতে নানাভাবে পুতুলের বিরুদ্ধে অপমানজনক প্রচার চালাতো সে। এ অপমানের জ্বালা সইতে না পেরেই নিজের গায়ে কোরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে পুতুল। মৃত্যুর আগে পুতুল সবার কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তার স্বামী।

খবর পেয়ে সিংগাইর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে বিকাল পযর্ন্ত এ ব্যাপারে থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।

নিহত পুতুলের বাবা ও তার স্বামী জানান, ময়নাতদন্তের পর নিহতের লাশ ঢাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হবে।আত্মহত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার সিংগাইর থানায় বখাটে মিন্টুর বিরুদ্ধে মামলা করবেন তারা।

বি.এম খোরশেদ/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।