ত্রাণের বস্তা নিয়ে গভীর রাতে সেই ভিক্ষুকের বাড়িতে ডিসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি  নওগাঁ
প্রকাশিত: ০২:৪১ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০২০

রাস্তাঘাটে মানুষজন নেই। চারদিক নীরব-নিস্তব্ধ দু’একটি ট্রাক মাঝেমধ্যে ছুটে চলছে। করোনা দুর্যোগে এলাকার মানুষ ঘরবন্দি। কোথাও কারও সাড়াশব্দ নেই। নীরব-নিস্তব্ধ পথ ধরে শুক্রবার (০৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৃদ্ধা সাবিয়া বেগমের বাড়িতে ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেলেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন অর রশীদ।

গভীর রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে তার হাতে একটি খাবারের বস্তা ধরিয়ে দেন ডিসি। যেখানে রয়েছে- চাল, ডাল, আলু, লবণ, তেলসহ অন্যান্য দ্রবাদি। এ সময় একটি কম্বলও দেয়া হয় তাকে।

শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত রোদে নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মাঠে ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম একটি টিনের ওপর নষ্ট ভাত পানিতে পরিষ্কার করে শুকাচ্ছিলেন। আর এমন দৃশ্য দেখে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রিয়াজ খান মোবাইলে ছবি তুলে তার ফেসবুকে পোস্ট করেন।

DC

এ নিয়ে জাগো নিউজে ‘ত্রাণ না পেয়ে নষ্ট ভাত শুকাচ্ছেন, চাল হলে রান্না করবেন ভিক্ষুক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। বিষয়টি দেখে অনেকেই মর্মাহত হন। এরপর বিভিন্ন স্থান থেকে ওই বৃদ্ধাকে সহযোগিতা করার জন্য যোগাযোগ করা হয়। সংবাদটি নজরে আসে জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদের। এরপর তিনি রাতের আঁধারে ওই কলোনির ২৫টি কর্মহীন পরিবারকে ঘর থেকে ডেকে ডেকে ত্রাণসামগ্রী দিয়েছেন।

বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একজন ভাত দিয়েছিল। সকালে কিছুটা নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট ভাত ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছিলাম। যাতে পরে অন্য চালের সঙ্গে রান্না করে খেতে পারি। হঠাৎ করেই শুক্রবার বিকেলে দুজন চাল, ডাল দিয়ে গেল। আবার রাতে এসে ডিসি স্যার বস্তায় করে বিভিন্ন ধরনের খাবার দিলেন। ডিসি স্যারকে কাছে পেয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালাম। ঘরে এখন প্রায় ২০-২২ কেজি চাল হয়েছে আমার।

একই কলোনির গৃহবধূ শিউলি বলেন, স্বামী অটোরিকশা চালায়। কিছুদিন থেকে অটোরিকশা চালানো বন্ধ আছে। রোজগার না থাকায় বাড়ির চার সদস্য খুব সমস্যায় পড়েছি। আমাদের কেউ কোনো খোঁজখবর নিতে আসেনি। সাবিয়া বেগমের সুবাদে ডিসি স্যার আমাদের খাবার দিয়েছেন। আশা করছি এই খাবার দিয়ে সপ্তাহ চলে যাবে আমাদের।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ বলেন, অনেক পরিবার যারা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে আছেন। কারো কাছে চাইতে পারেন না। গভীর রাতে এসে ওসব পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিরতণ করা হচ্ছে। এতে করে জনসমাগমের ভিড় হবে না। খাবারের অভাবে কেউ অভুক্ত থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট বরাদ্দ আছে এবং বরাদ্দ আসছে। আমরা সবাইকে খাবার দেব।

তিনি বলেন, কেউ সাহায্য দিতে চাইলে একই ব্যক্তিকে না দিয়ে যিনি মূলত কর্মহীন হয়েছেন তাকে দেবেন। জেলার বিত্তবান মানুষ, দফতর বা সংস্থা, এনজিও অথবা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন যারা সহায়তা দিতে চান, সবাইকে অনুরোধ করব একই ব্যক্তি যাতে বার বার সহায়তা না পায় তা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তালিকা করুন।

তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনুগ্রহ করে আপনারা সকলে নিজ নিজ বাড়িতে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। করোনার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করুন। কারও ঘরে খাবার না থাকলে আমাদেরকে অবহিত করুন। আমরা খাবার পৌঁছে দেয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।

dc

উল্লেখ্য, ৭০ বছরের বৃদ্ধা সাবিয়া বেগম নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া বিহারি কলোনি মহল্লার ছোট যমুনা নদীর গাইড ওয়াল সংলগ্ন সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে গত কয়েক বছর ধরে বসবাস করছেন। স্বামী নুরু মিয়া মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। মেয়ের বয়স যখন ৮ মাস তখন স্বামী মারা যান। বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ করে জীবন চলত তার। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর এখন একা থাকেন। বয়স হওয়ায় তার এখন ভিক্ষা করে দিন চলে। ওই কলোনিতে প্রায় ২৫টি দিনমজুর পরিবার বসবাস করে।

করোনায় আতঙ্কের পর কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে ছিলেন সাবিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রতিবেশী ভাত দিয়েছেন তাকে। রাতে কিছু খাওয়ার পর বাকিটা সকালে নষ্ট হয়ে যায়। ওই নষ্ট ভাত তিনি ফেলে না দিয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছিলেন।

আব্বাস আলী/এএম

 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।