আবারও সুদিনে মংলা বন্দর


প্রকাশিত: ০৮:০৩ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৫

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মংলায় আবারো সুদিন ফিরে আসতে শুরু করেছে। ঘষিয়াখালী চ্যানেল চালু হওয়ায় বন্দরে জাহাজের আগমন গত দেড় দশকের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বর্তমানে ১৫টি বিদেশি জাহাজ অবস্থান করছে। চলতি সপ্তাহে আরো ১০-১২টি জাহাজ বন্দরে আসবে বলে জানা গেছে।

বন্দরের শ্রমিকরা উচ্ছাস প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, গত ১৫ বছরে একসঙ্গে এত জাহাজ মংলা বন্দরে অবস্থান করেনি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কর্মচাঞ্চল্য।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে এ বন্দরে বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য খালাস করতে মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হারবারিয়া ও বেসক্রিক এলাকায় একই সঙ্গে ১৫টি জাহাজ অবস্থান নেয়। এর মধ্যে চারটি জাহাজ পণ্য খালাস শেষে বন্দর ত্যাগ করেছে। বর্তমানে বন্দর চ্যানেলে পণ্য বোঝাই ১১টি জাহাজ খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, একটিতে গম, দুটিতে কয়লা ও অন্যান্য জাহাজে রয়েছে সার। সব জাহাজেই পণ্য খালাসের জন্য একযোগে কাজ চলছে।

সূত্রানুযায়ী, গত রোববার পর্যন্ত ১১টি বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ অবস্থান করছে এ বন্দরে। মংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্স কোম্পানির মালিক এইচ এম দুলাল ও মেসার্স হাসেম অ্যান্ড সন্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জুলফিকার আলী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মংলা বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রফতানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ বন্দরে জাহাজের চলমান এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হবে এবং ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।

খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বর্তমান সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া রামপাল-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল পুনরায় খনন করে চালু করায় মংলা বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে নৌযানগুলো দ্রুত সময়ে এই রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে।

বিদেশি জাহাজ ভেড়ার রেকর্ডের কথা নিশ্চিত করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে জানান, বন্দরের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হওয়ায় এরই মধ্যে নেপাল, ভুটান ও ভারত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে মংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছে। মংলা বন্দর এলাকায় ২০৫ একর জমিতে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, খুলন-মংলা রেললাইন স্থাপন ও ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মংলা বন্দরকেন্দ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, ২০০৯ সালের শুরুতেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার প্রয়াসে মংলা বন্দরের উন্নয়নের দিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব ও নজর দেয়। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে মংলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শক্তিশালী করতে খানজাহান আলী বিমানবন্দর স্থাপন ও পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বিমান বন্দরের জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের পাশাপাশি খুলনায় অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ হচ্ছে এবং একই ধারাবাহিকতায় মংলার সঙ্গে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগের লক্ষ্যে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রেলসেতুও নির্মাণ করা হবে।

আলমগীর হান্নান/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।