গভীর রাতে থানকুনি পাতা খেতে একের পর এক ফোন

সাইফুল ইসলাম মিরাজ
সাইফুল ইসলাম মিরাজ সাইফুল ইসলাম মিরাজ বরগুনা
প্রকাশিত: ০২:৩৮ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২০

গুজবে কান দেয়া যেন বাঙালির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়েও ছড়াচ্ছে নানা গুজব। একের পর এক গ্রেফতারের পরও থেমে নেই গুজব ছড়ানো। বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা যখন করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে হিমশিম খাচ্ছেন তখন গুজব রটেছে ‘গভীর রাতে থানকুনি পাতা খেলেই মিলবে করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ।’

মঙ্গলবার রাতে এমনই এক গুজবে ঘুম নষ্ট করেছেন দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ। সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই না করে সারারাত তারা থানকুনি পাতা খুঁজেছেন আর খেয়েছেন। শুধু তাই নয়, দূরে থাকা স্বজনদেরও গভীর রাতে ফোন করে ঘুম ভাঙিয়ে খেতে বলেছেন থানকুনি পাতা।

এ গুজবের সৃষ্টি কোথা থেকে তা স্পষ্ট জানা না গেলেও মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই বরগুনায় থানকুনি পাতা সম্পর্কে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ গুজব প্রকট আকার ধারণ করে।

বরগুনা পৌরসভার কেজি স্কুল এলাকার বাসিন্দা মো. শহীদুল্লাহ ফকির বলেন, রাত ৩টার দিকে ঘরে বসে আমি কোরআন তেলোওয়াত করছিলাম। এসময় ঘরের পাশে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি আমার চার-পাঁচজন প্রতিবেশী গভীর রাতে থানকুনি পাতা খুঁজছেন। তাদের কাছে জানতে পারি ভোরে থানকুনি পাতা খেলে মিলবে করোনা সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ। এরপর তাদের আমি বকাঝকা করে চলে যেতে বললেও তারা নিরুৎসাহিত হননি বরং থানকুনি পাতা খুঁজে বের করে খেয়েছেন বলে শুনেছি।

তিনি আরও বলেন, ফজরের নামাজের সময় হলে আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। তখন মসজিদে গিয়েও একই আলোচনা শুনি। তখন মসজিদের ইমাম সাহেব বলেন, তাকেও তার স্বজনরা ফোন করে ভোরে থানকুনি পাতা খেতে বলেছেন করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।

একই ঘটনা ঘটেছে জেলাজুড়ে। বরগুনার বাসিন্দা ওলি মোর্শেদ চাকরি করেন ঝালকাঠিতে। চাকরির সুবাদে তিনি ঝালকাঠিতে থাকেন। তিনি বলেন, ভোরে আমার স্বজনরাও আমাকে ফোন করে থানকুনি পাতা খেতে বলেন।

বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল্লাহ বলেন, ভোরে আমার স্বজনরা আমাকে ডেকে তোলে থানকুনি পাতা খাওয়ার জন্য। এ পাতা খেলে নাকি করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে। এরপর আমি থানকুনি পাতা খেয়ে আবার ঘুমিয়েছি।

সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা মামুন বলেন, আমাদের এলাকায় মধ্যরাতে দল বেঁধে নারী-পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ মিলে থানকুনি পাতা খুঁজেছেন এবং ভোর রাতে খেয়েছেন। এমনকি যারা থানকুনি পাতা খুঁজে পাননি তারা অন্যদের কাছে অনুনয়-বিনয় করে চেয়ে খেয়েছেন।

বয়োবৃদ্ধ স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, থানকুনি পাতার বিশেষ কিছু ঔষুধী গুণ রয়েছে। বিশেষ করে পেটের সমস্যা দেখা দিলে এই থানকুনি পাতা খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে শত শত বছর ধরে। তবে থানকুনি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করা অসম্ভব বলে জানিয়েছে বরগুনার স্বাস্থ্য বিভাগ।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। সবে প্রতিষেধকের পরিক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।

তিনি আরও বলেন, থানকুনি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে।

এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।