নিয়োগ পেয়েই প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি আবেদনের হিড়িক

মোসাইদ রাহাত
মোসাইদ রাহাত মোসাইদ রাহাত , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, ১৪ মার্চ ২০২০

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই ছিল তর্ক-বিতর্ক। ফলাফল প্রকাশের পরও হাইকোর্টের রায়ে বেশ কয়েকটি জেলায় স্থগিত করা হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। তার ফলস্বরুপ শিক্ষক নিয়োগে উত্তীর্ণ শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানান। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সুনামগঞ্জে ৬২১ জনকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের এক সপ্তাহ পার না হতেই নানা অজুহোতে বদলির আবেদনের হিড়িক পড়েছে। বদলি চেয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করছেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৬২১ জন শিক্ষক। সেখান থেকে কয়েকজন অন্য চাকরির সন্ধান পেয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র পান ৬১৩ জন। যার মধ্যে থেকে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় যোগদান করেছেন ৬০২ জন শিক্ষক। বাকিরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি।

যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮ জন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩১ জন, তাহিরপুর উপজেলায় ১০৮ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৯ জন, দিরাই উপজেলায় ৫৬ জন, ধর্মপাশা উপজেলায় ১১১ জন, শাল্লা উপজেলায় ২৬ জন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৬৫ জন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৮ জন এবং ছাতক উপজেলায় ৩৫ জন শিক্ষক তাদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু যোগদানের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই প্রায় ১৫০টির অধিক বদলির আবেদন জমা পড়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। বাবা-মা একা অথবা নিজবাড়ি থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূর অথবা দুর্গম এলাকা বলে বাড়ির পাশের কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করার জন্য আবেদন করছেন ওই শিক্ষকরা।

বাড়ির পাশে বিদ্যালয়ে পদায়নের জন্য আবেদন করা তাহিরপুর উপজেলার জন্টু রায় বলেন, আমি বাদাঘাট ইউনিয়নে থাকি। কিন্তু আমাকে জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি আমার বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। হাওর এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব খারাপ। বাসায় আমার মা একা থাকেন। তাই আমি আমার বাড়ির পাশে বিদ্যালয়গুলোতে পদায়ন দেয়ার জন্য আবেদন করেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বদলির জন্য আবেদন করা এক নারী শিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি জগন্নাথপুর পৌর শহরে। কিন্তু আমাকে যেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেখানে যেতে আমাকে তিনটি গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়। আমি একজন মেয়ে মানুষ আমার এতো দূর যাওয়া আসা করা বিপদজনক, ব্যয়ও অনেক বেশি। তাই আমাকে আশপাশের কোনো বিদ্যালয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেছি ।

জগন্নাথপুর উপজেলার নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র দেব বলেন, আমার বাড়ি থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে আমাকে পদায়ন করা হয়েছে। বর্ষাকালে সেখানে যাওয়া আসা খুবই কষ্টকর। আমি পরিবারের একমাত্র ছেলে। আমার জন্য জায়গাটি অনেক দূরে হয়ে যায়।

অন্যদিকে ধর্মপাশা উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মধ্যনগর থানার বাঙাল ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু জানুয়ারিতে আমার স্ত্রীর ক্যানসার ধরা পড়ায় সেখানে গিয়ে ক্লাস করানো আমার জন্য কষ্ট হয়ে যায়। আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। সেজন্য আমি আবেদন করেছি আমাকে বাড়ির পাশে কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করে দেয়ার জন্য।

শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের যেখানে পদায়ন করা হয়েছে সেখানেই যোগদান করা প্রয়োজন। যোগদানের শুরুতেই যদি বদলির আবেদন আসে সেটি ভালো দেখায় না। তবে যারা দুর্গম এলাকা থেকে বদলির আবেদন করেছেন তাদের যেনো নতুন কর্মস্থলে এক বছর পার হওয়ার পর বদলি করা হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে অনেকগুলো আবেদন জমা পড়েছে। সেখান থেকে আমরা নারী শিক্ষকদের বিষয়টি অগ্রধিকার দিলেও সব আবেদন বিবেচনার মাধ্যমে দেখা হবে। যাদের সমস্যা খুব গুরুতর তাদেরই আমরা কাছের বিদ্যালয়ে পদায়নের ব্যবস্থা করবো। বাকিরা তাদের কর্মস্থলেই থাকবেন।

আরএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।