চোখের সামনে বিমানে ভাই-ভাতিজিকে পুড়তে দেখেছি

শিহাব খান
শিহাব খান শিহাব খান , উপজেলা প্রতিনিধি শ্রীপুর (গাজীপুর)
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১২ মার্চ ২০২০

‘১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই বিমান নামবে। মাইকে এমন ঘোষণা এলো। ভ্রমণ আনন্দে অনেকটা উত্তেজনা নিয়ে বসে আছি। বাইরে কী হচ্ছে বিমানের ভেতরে বসে খুব ভালো করে বোঝা যাচ্ছে না। আমরা পাঁচজন বিমানের মাঝামাঝি বসে ছিলাম। ল্যান্ড করার সঙ্গে সঙ্গেই বিকট শব্দের পাশাপাশি বিমান ভেতরের চারদিক কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। পায়ের নিচে আগুনের তাপ পাচ্ছিলাম। বিধ্বস্ত বিমান থেকে বের হতে বিমানের জানালায় লাথি দিচ্ছিলাম, কিন্তু জানালা ভাঙতে ব্যর্থ হই। সামনের দিকে একটু আলো দেখতে পেয়ে আমি ওই আলো ধরে এগিয়ে বাইরে বেরিয়ে যাই। ঠিক তখনই মনে হলো আমার সঙ্গে স্ত্রী, ভাই-ভাবি আছে। তাদের আনতে আবারও আমি বিমানের ভেতরে ঢুকি। ভেতরে গিয়ে ডাকাডাকি করতেই ভাবিকে পাই। ভাবিকে বাইরে রেখে আবারও বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর যাই। ভেতরে গিয়েই আমার স্ত্রী স্বর্ণা ও ভাইকে ডাকতে থাকি। এসময় স্বর্ণা কালো ধোয়ার মধ্যে হাতটি বাড়িয়ে দেয়। তাকে যে কিভাবে বের করে এনেছি তা জানি না। পরে তাকে বিমানের বাইরে আনতে আনতেই ওই বিধ্বস্ত বিমানে আবারও বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আর কাউকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি। চোখের সামনে বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর ভাই আর ভাতিজিকে পুড়তে দেখেছি। ওই দৃশ্য দেখা ছাড়া আমার কিছুই করার ছিল না।’

২০১৮ সালে ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় আহত মেহেদী হাসান মাসুম এভাবেই স্মৃতিচারণ করছিলেন।

ওই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে আসা শ্রীপুরের মেহেদী হাসান মাসুম ও তার স্ত্রী সাইদা কামরুন্নাহার স্বর্ণাকে প্রতিমুহূর্তে তাড়া করে বেড়ায় দুঃসহ সেই স্মৃতি। ঘুমের ঘোরে এখনও মাঝে মধ্যেই আঁতকে ওঠেন তারা।

মাসুম বলেন, ভ্রমণের জন্য একসঙ্গে ফুফাতো ভাই ফারুক হোসেন প্রিয়ক, তার স্ত্রী আলমুন নাহার এ্যানী, তাদের মেয়ে প্রিয়ংময়ী তামাররা ও আমার স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণাকে নিয়ে বের হয়েছিলেন। ভ্রমণের সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও এমন একটি দুর্ঘটনা জীবনের ছন্দের পতন ঘটাবে তা ভাবতেও পারিনি। যখন একা থাকি তখনই ওই দুর্ঘটনার স্মৃতি কষ্ট দেয়। আজকে আমিও ওই দুর্ঘটনায় মারা গেলে দুই বছর হতো। ভাই আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে, কাছের মানুষগুলো আগুনে পুড়ছে, আমি কিছুই করতে পারছি না। দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন দৃশ্য আমি দেখেছি। মরার আগে মৃত্যুবরণ করার মতো অবস্থায় আছি।

তিনি আরও বলেন, চোখের সামনেই ভাই-ভাতিজির মৃত্যু দেখেছি। এমন মৃত্যু আসলে মানা যায় না। সৃষ্টিকর্তা এখন নতুন জীবন দিলেও আমরা স্বাভাবিক হতে পারিনি।

এছাড়া তিনিই প্রিয়কের মায়ের যাবতীয় দেখভাল করছেন জানিয়ে বলেন, প্রিয়ক আমার ফুফাতো ভাই। প্রিয়কের অবর্তমানে আমিই তার মায়ের দেখভাল করছি।

শিহাব খান/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।